আমি বাইরে বিশ্বাসই হচ্ছে না: খাদিজা

কারামুক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। ছবি: সংগৃহীত

হঠাৎ ফোনে খাদিজার বড় বোন সিরাজুম মুনিরার নম্বর থেকে কল এল। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এল, 'হ্যালো, আমি খাদিজা। আমি যে বাইরে বিশ্বাসই হচ্ছে না।'

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ১৪ মাস কারাগারে থাকার পর আজ সোমবার কারামুক্ত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা।

এরমধ্যে ছয়বার জামিন আবেদন হয় খারিজ হয় তার। গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর অবশেষে পশ্চিম মনিপুরীপাড়ায় বাড়িতে ফিরেছেন তিনি।

তার অপরাধ একটি জুম মিটিংয়ের হোস্ট ছিলেন তিনি, যে মিটিংয়ে অংশ নিয়ে সরকারবিরোধী মন্তব্য করেছিলেন একজন।

খাদিজা ফোনে বলতে থাকেন, 'মাকে আবার জড়িয়ে ধরতে কেমন লাগবে তা বলে বোঝাতে পারব না।'

যদিও গত ১৪ মাসে মায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল খাদিজার। আদালতে শুনানির সময় তার মা গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই তার হাত বাঁধা ছিল কিংবা পুলিশ তাকে ঘিরে ছিল।

কারাগারে থাকা অবস্থায় মা গিয়েছিলেন খাদিজার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু, সে সময়ও দুজনের মাঝে ছিল ব্যারিকেড, ছিল প্রহরীদের কঠোর নজরদারি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী খাদিজা ফোনে বলছিলেন, 'জেলের ভেতরে অনেকেই ছিলেন যারা সত্যিই আমাকে অনেক আদর করতেন। কিন্তু বাইরে বের হওয়ার পরে জেলগেটে বোনকে জড়িয়ে ধরার অনুভূতির সঙ্গে কিছুই তুলনা করা যায় না।'

সকাল সোয়া ৯টার দিকে তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে বের হন। ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে খাদিজা জানান, মা তার জন্য গরুর মাংসের তরকারি রান্না করেছিলেন।

খাদিজার বাবা কুয়েতপ্রবাসী। তার সামান্য উপার্জনেই চলে সংসার। গরুর মাংস এই পরিবারটির জন্য বিশেষ মেন্যু। 

দুপুরে কথা হচ্ছিল খাদিজার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, 'রোজা রেখেছি, সন্ধ্যা পর্যন্ত মায়ের রান্না গরুর মাংস খেতে পারব না।'

কারাগারে রোজা রাখার চর্চা করতেন বলে জানালেন। 'প্রতিদিনই অলৌকিক কিছুর জন্য প্রার্থনা করতাম। সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতাম। গত মাস থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন রোজা রেখেছি,' বলেন তিনি।

এতবার তার জামিন আবেদন খারিজ করা হয়েছে যে মুক্তির জন্য অলৌকিক কিছুর প্রার্থনা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

নিম্ন আদালতে আবেদন বারবার খারিজ হওয়ার পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট খাদিজাকে স্থায়ী জামিন দেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তখন জামিন আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দুটি পিটিশন দাখিল করে এবং একজন চেম্বার বিচারক জামিন আদেশ স্থগিত করেন।

এরপর খাদিজা আপিল বিভাগের কাছে বিচার চেয়ে চেম্বার বিচারপতির স্থগিতাদেশ বহাল করার আবেদন করেন।

কিন্তু ১০ জুলাই প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ তার আবেদনের শুনানি চার মাসের জন্য স্থগিত করেন।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বিচার বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পরই জামিন পান খাদিজা।

তিনি আইনজীবীদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, খাদিজা কতদিন কারাগারে ছিলেন। উত্তর শুনে তিনি প্রকৃতই অবাক হয়েছিলেন।

আজ কারামুক্তির পরই খাদিজা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান।

খাদিজার মুক্তি দেশের জন্য নিরাপদ হবে কিনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগ যখন এই ভাবছেন, খাদিজা ভাবছেন তার পড়াশোনা নিয়ে।

তিনি বললেন, 'আমার চতুর্থ সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে এবং আমি পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। আজ আমার পরিসংখ্যান পরীক্ষা ছিল। আমি চারটির মধ্যে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।'

'আমি এখন ঘরে থেকেই পড়াশোনা করতে পারব। পরের পরীক্ষাগুলোতে ভালো করতে পারব,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
US reciprocal tariff

Trump announces 30% tariffs on EU, Mexico

The EU had hoped to reach a comprehensive trade agreement with the US for the 27-country bloc

59m ago