বাগেরহাট

বর্ষায় বেড়েছে ‘চাঁই’য়ের চাহিদা

বাধাল হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা চাঁই। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী/স্টার

বাগেরহাটের খাল-বিল ও চরাঞ্চলের জলাশয়গুলোতে মাছ ধরতে বাঁশের তৈরি ফাঁদের চাহিদা বেড়েছে—স্থানীয় ভাষায় এগুলোকে বলা হয় 'চাঁই'। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে জেলার হাটগুলোতে।

সম্প্রতি বাগেরহাটের কচুয়ার বাধাল হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতি হাটের দিন অন্তত সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ চাঁই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার এখানে হাট বসে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এভাবেই বিক্রি চলবে বলে আশাবাদী বিক্রেতারা।

প্রতিটি চাঁই ১১০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চাঁই কিনতে আসা রেজাউল শেখ বলেন, 'আমাদের অঞ্চলে খাল খননের কারণে পানি বেড়েছে, সেইসঙ্গে মাছও বেড়েছে। তাই খাল, মাঠসহ যেখানেই পানি চলাচল করে সেখানেই আমরা চাঁই পাতি।'

তিনি জানান, বাঁশের চাঁইয়ে রয়না, পারসে, চিংড়িসহ নানান মাছ ধরা পরে। তবে, ছোট ছোট মাছগুলো চাঁইয়ে আটকে পড়ে না, যেগুলো পরবর্তীতে বড় হয়।

আরেক ক্রেতা নজু শেখ বলেন, 'বাড়ির কাছে নতুন পানি এসেছে। এ সময় নদীর মাছও খাল-বিলে চলে আসে। চাঁই দিয়ে সহজেই মাছ ধরা যায়। আর এক একটি চাঁই প্রায় এক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এই ফাঁদ পেতে রাখলে মাছ ধরা পড়বেই।'

বাধাল বাজারের চাঁই বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'বাধাল, নুরুলাপুর, সাংদিয়া, আফরাসহ অনেক গ্রামের মানুষ এই হাটে চাঁই কিনতে আসেন। বর্ষায় পানি জমে এমন সব এলাকার মানুষ এই সময়টায় ব্যস্ত থাকেন মাছ ধরা নিয়ে।'

তিনি বলেন, 'চাঁইয়ের বিক্রি বেড়ে যায় বর্ষার শুরুর দিকে। ডিসেম্বর পর্যন্ত বিক্রি চলবে।'

বাধাল হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা চাঁই। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী/স্টার

দামের বিষয়ে চাঁইয়ের কারিগর কচুয়া উপজেলার সাংদিয়া গ্রামের বাসুদেব দাসের ভাষ্য, 'বাঁশ ও লতার দাম বেড়ে যাওয়ায় চাঁইয়ের দাম এবার একটু বেশি নিতে হচ্ছে। আগে আমরা ৪৫ থেকে ৭৫ টাকায় চাঁই বিক্রি করতে পারতাম। এখন ৮০ থেকে ১৫০ টাকা নিতে হচ্ছে। এরপর বিক্রেতারা তাদের লাভ রেখে হাটে বিক্রি করেন।'

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রাসেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাঁশ দিয়ে তৈরি হওয়ায় চাঁইগুলো পরিবেশবান্ধব। এই ফাঁদ থেকে মাছের ছোট ছোট পোনা বেরিয়ে যেতে পারে। শুধু বড় মাছগুলোই ধরা পড়ে।'

তিনি বলেন, 'খাল খননের ফলে মাছের আবাসস্থল উন্নত হওয়ায় এবং পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার মাছ বেড়েছে। সেইসঙ্গে চাঁইয়ের চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে। চাঁই দিয়ে মাছ ধরলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না।'

'খাল খননের ফলে মাছের হারিয়ে যাওয়া প্রজাতিগুলোও ধীরে ধীরে ফিরে আসছে এবং নদী-খাল থেকে লোকালয়ে ঢুকছে। বাঁশের ফাঁদ দিয়ে মাছ ধরলে কোনো মাছের প্রজাতি নির্মূল হবে না,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Thousands of crores of taka of citizens wasted on unnecessary projects: commerce adviser

The adviser, however, added that liabilities of foreign-funded projects should still be repaid

46m ago