নরাইট বিলে লাল শাপলার উদ্ভাস

এই মুহূর্তে পুরো নরাইট বিলজুড়ে রাজত্ব করছে লাল শাপলার দল। বিলের ফুটন্ত শাপলার শোভা একদিকে যেমন ভ্রমণপিপাসুদের মনের খোরাক জুগিয়ে চলেছে, তেমনি এই শাপলা বেচে আর পর্যটকদের কাছে নৌকা ভাড়া দিয়ে বাড়তি আয়ের পথ তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের জন্য।
বিলের জলে ফুটন্ত শাপলার আসল সৌন্দর্যের দেখা মেলে ভোরবেলায়। ছবি: সংগৃহীত

ছন্দে-ছড়ায় 'গোমড়ামুখো' বাঙালিদের বিবিধ হাসির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক রোকনুজ্জামান খান। লিখেছিলেন, 'কাজল বিলে শাপলা হাসে/হাসে সবুজ ঘাস।/খলসে মাছের হাসি দেখে/হাসে পাতিহাঁস।'

শিশু-কিশোর সংগঠক রোকনুজ্জামান খান সবার কাছে পরিচিত দাদাভাই নামে। রচনায় সম্ভবত তিনিই প্রথম বিলের পানিতে ফুটন্ত শাপলাকে হাসিমুখের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

দাদাভাইয়ের ছড়ায় উঠে আসা সেই কাজল বিলটা ঠিক কোথায় তা ঠিক জানা যায় না। তবে নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো তুলার মতো মেঘ আর বরফসাদা কাশফুল ফোটার এই শরতে রাশি রাশি ফুটন্ত শাপলার দেখা মিলবে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামের নরাইট বিলে।

এই মুহূর্তে পুরো নরাইট বিলজুড়ে রাজত্ব করছে লাল শাপলার দল। বিলের ফুটন্ত শাপলার শোভা একদিকে যেমন ভ্রমণপিপাসুদের মনের খোরাক জুগিয়ে চলেছে, তেমনি এই শাপলা বেচে আর পর্যটকদের কাছে নৌকা ভাড়া দিয়ে বাড়তি আয়ের পথ তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের জন্য।

এখন যদি কেউ সকাল সকাল নরাইট বিলের শাপলার শোভা দেখতে যান তাহলে চোখে পড়বে, এই শাপলাকে ঘিরেই সেখানে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিলের পানিতে ঘুরতে ঘুরতে কেউ হয়তো দুয়েক গোছা শাপলা তুলে নিচ্ছেন নৌকায়। কেউ আবার দরদাম করে বিলের তাজা মাছ কিনে নিচ্ছেন।

বিলের শাপলা বেচে বাড়তি আয়ের সংস্থান হচ্ছে অনেকের। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয়রা বলছেন, টোক ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামের নরাইট বিলটি ইতোমধ্যে 'শাপলাবিল' নামে পরিচিতি পেয়েছে। শাপলা ফোটার মৌসুমে বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে কাছে-দূরের অনেকে এখানে বেড়াতে আসেন। শাপলা দেখার পাশাপাশি ছায়াঘেরা গ্রামের শান্ত-কোলাহলমুক্ত পরিবেশে পাখ-পাখালির ডাককে সঙ্গী করে একটি বেলা কাটিয়ে চলে যান।

পাঁচুয়া গ্রামের বাসিন্দারের ভাষ্য, বিলের জলে ফুটন্ত শাপলার আসল সৌন্দর্যের দেখা মেলে ভোরবেলায়। সূর্য ওঠার পর থেকে ফুটন্ত শাপলাগুলো আস্তে আস্তে মুখ গুটিয়ে নেয়। তাই এই সময়টিতেই শাপলার শোভা দেখতে আসা মানুষের ভিড় থাকে বেশি। বেড়া গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের আনাগোনা-কোলাহলও কমতে থাকে।

শাপলাবিলে পৌঁছাতে কাপাসিয়া থেকে প্রথমে যেতে হবে আমরাইদ বাজারে। সেখান থেকে জলপাইতলা হয়ে টোক ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রাম। গ্রামবাসীদের মতে, নরাইট বিলো মোট নয়টি গোপ (কোণ) আছে। নয়টি গোপ মিলেই পুরো বিলের বিস্তৃতি।

সম্প্রতি সেখানে কথা হয় ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা নাজমুল ইসলামের সঙ্গে। জানান, আগেও কয়েকবার তিনি এখানে এসেছেন বন্ধুদের নিয়ে। তার ভাষ্য, 'ঢাকার কাছাকাছি যে এত সুন্দর একটা জায়গা আছে সেটা নিজ চোখে না দেখলে কেউ বুঝবেন না।'

ডাটাসহ অনেকগুলো শাপলা হাতে দেখা গেল আল আমীন নামের স্কুলশিক্ষার্থীকে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ফুল তোলার পাশাপাশি বিলের পানিতে সাঁতারও কেটেছে সে।

একইভাবে বিলের পানিতে শাপলার শোভা দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের ভূবনের চালা গ্রামের আসাদুজ্জামান এরশাদ, স্থানীয় বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম, কিশোর ও মাসুমের মতো অনেকে।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, 'দেখলাম লাল শাপলার পাশাপাশি বিলে সাদা ও বেগুনি শাপলাও ফুটেছে। তবে সংখ্যার বিচারের লালের কাছে বাকিগুলো কিছুই না।'

প্রতি বছর শাপলা ফোটার মৌসুমের ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে আসা অনেকে ভিড় করেন পাঁচুয়া গ্রামে। ছবি: সংগৃহীত

বাজারে সবজি হিসেবেও শাপলার খুব চাহিদা আছে। এটি খুব পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। তাই স্থানীয়দের অনেকে প্রতিদিন নরাইট বিলের শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করেন। কেউ কেউ নৌকা ভাড়া দেন পর্যটকদের কাছে। আবার কাউকে কাউকে বেড়াতে আসা মানুষের কাছে বিল থেকে তোলা তাজা মাছ বিক্রি করতেও দেখা যায়।

এভাবে নরাইট বিলের শাপলা স্থানীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রেখে চলেছে।

কাপাসিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খাঁনের ভাষ্য, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা এই শাপলাবিলের সৌন্দর্য ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে শাপলার শোভা দেখতে আসা পর্যটকরা যাতে নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগেন, বেড়াতে আসা নারী ও শিশুরা যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনার শিকার না হন, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে বলেও জানান করেন এই জনপ্রতিনিধি। আর এ জন্য গ্রামবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

AL won't accept change in polls schedule if deadline is crossed: Quader

Awami League will not accept any change to the election schedule if it crosses the deadline set by the constitution, the party's General Secretary Obaidul Quader said today. Alleging that BNP wants to obstruct the polls, Quader said, "They want to question the election. Now they are openly obstructing, openly taking a stand against the election.

14m ago