মেঘনায় ইলিশ ধরার জায়গা দখল নিয়ে সংঘর্ষ-গুলি, ২ জেলে নিহত

নোয়াখালী
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

নোয়াখালীতে মেঘনা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে জেলেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে  দুই জেলে নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন আরও ৫ জন।

আজ বৃহস্পতিবার ভোরে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ দুই জনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন— সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়ন এলাকার আবদুর রহমান (৪০) এবং একই উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ইসমাইল হোসেন রাজু (৪২)।

গতকাল বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসান চরের পূর্বদিকে ও সন্দ্বীপের পশ্চিমে কালির চর এলকায় মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।

কোস্টগার্ড জানায়, মাছ ধরার জায়গার দখল নিতে দুই গ্রুপ জেলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

তবে আহত জেলেদের দাবি কোস্টগার্ডের সহায়তায় হামলা চালায় জলদস্যু কেফায়েত বাহিনী।

জেলে নৌকার মালিক সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলা উদ্দিন কোম্পানি আজ জানান, গুলিবিদ্ধ দুই জনকে উদ্ধার করে রাতে সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরবর্তীতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে সেখান থেকে রাতে গুলিবিদ্ধ দুই জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কোস্ট গার্ড আহত পাঁচ জনকে উদ্ধার করে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

আহতরা হলেন রাজু (১৩), জুয়েল (২৬), আব্দুর রহমান (২২), হোসেন (৪০), ইসমাইল (৪০)।

হামলার শিকার ও আহত জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, সুবর্ণচর উপজেলার মাইন উদ্দিন মাঝি ও অলি মাঝি হাতিয়া উপজেলার মেঘনা নদীর স্বর্ণদ্বীপের পশ্চিমে হাতিয়া ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় বাঁশের খুটি বসিয়ে খোপ দিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে মাছ শিকার করে আসছেন। কিছু দিন আগে এই খোপ দখলের চেষ্টা চালায় কেফায়েত বাহিনী। বুধবার বিকেলের দিকে কেফায়েত বাহিনী সুবর্ণচরের জেলেদের জাল কেটে দেয়। খবর পেয়ে দুটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে সেখানে যায় মাঈন উদ্দিন ও আলা উদ্দিন মাঝির  জেলেরা। একপর্যায়ে জলদস্যু কেফায়েত বাহিনীর সদস্য আলতাফ, নুরউদ্দিন ও জুয়েল সন্দীপ কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় জেলেদের দুটি মাছ ধরার ট্রলারে দুই দফায় হামলা চালিয়ে মাছ, জাল, ট্রলারসহ মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। জেলেদের অভিযোগ একপর্যায়ে কেফায়েত বাহিনীর লোকজন গুলি ছুড়লে জেলে জিল্লুর ও নূর আলম গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় আহত ৫ জেলেকে কেফায়েত বাহিনীর সদস্যরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ আহতদের উদ্ধার করে রাত ১টার দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

জিল্লুর ও নূর আলমকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সন্দীপ কোস্টগার্ড স্টেশনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মো. মহিউদ্দিনের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

কোস্টগার্ড হাতিয়া স্টেশন কমান্ডার মো. সফি বলেন এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই।

ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কাউছার আলম ভূঁইয়া বলেন এ ধরনের একটি ঘটনার কথা শুনেছি তবে বিস্তারিত বলতে পারব না।  

কোস্ট গার্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. তাহসিনুর রহমান মাঈন উদ্দিন ও আলা উদ্দিন মাঝির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন সন্দ্বীপ ও ভাসান চর থানা এলকার মাঝামাঝি কালির চর এলাকায় নদী দখল করে খুঁটি বসিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছিল একদল জেলে। সেখানে আরও একটি জেলে গ্রুপ গিয়ে ওই এলাকা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। খবর পেয়ে নদী থেকে অবৈধ খুঁটি অপসারণ করতে সন্দ্বীপ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নিয়ে কোস্টগার্ড বুধবার বিকেলে অভিযান চালাতে গিয়ে দেখেন দুই গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত। সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কোস্টগার্ডের সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। কোস্টগার্ড বাহিনী কারও পক্ষ নিয়ে কাজ করে না। কোস্টগার্ড  সদস্যরা ক্যাম্পে ফেরার পথে চরে কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখেন যারা ছুরিকাঘাত ও লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে কোস্টগার্ড সদস্যরা উদ্ধার করে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তাদের মধ্যে দুই জন বৃহস্পতিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

15h ago