‘চোর’ আখ্যা দিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩

জহির উদ্দিন বেচু। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় 'চোর' আখ্যা দিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে দফায় দফায় পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

আজ রোববার ওই ঘটনায় দায়ের মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টার দিকে উপজেলার ছবির পাইক গ্রামে ধুমচর ছমিরপাইক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে হত্যার ঘটনা ঘটে।

নিহত জহির উদ্দিন বেচু (৪০) উপজেলার সুন্দলপুর ইনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর লামছি গ্রামের প্রয়াত মো. মোস্তফার ছেলে।

বেচুর মা নাজিয়া বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০-২৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে কবিরহাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিকেলে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।

কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন—সুন্দলপুর ইউনিয়নের ছবির পাইক গ্রামের মৃত বাদশা মিয়ার দুই ছেলে হাবিব উল্লা (৪৫) ও অজিউল্লা লিটন (৪০) এবং সদর উপজেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়নের মৃত মুকবুল আহমেদ চৌকিদারের ছেলে আবদুর রব খান সাহেব (৬৫)।

ওই নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, জহিরকে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। গুরুতর জখম হয়ে তিনি কাতরাচ্ছেন, আর লোকজন তা দেখলেও কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার ভোররাতের দিকে একদল লোক 'চোর' আখ্যা দিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন জহিরকে আটকের পর পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এক পর্যায়ে বেচুর চোখ, মুখ, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করা হয়। অমানুষিক নির্যাতনের পর একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় তাকে। সকাল ৯টা পর্যন্ত এভাবে গাছে বাঁধা অবস্থায় কাতরাতে থাকেন বেচু। পরে হাসপাতালে নেওয়ার সময় সকাল ১০টার দিকে মিয়ার হাট বাজারের কাছে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

কবিরহাট উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, নিহত জহির ২০২০ সাল থেকে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে আসছিলেন।

শাহীন মিয়া বলেন, ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিও দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় আটজনকে আসামি করে নিহতের মা নাজিয়া খাতুন বাদী হয়ে রোববার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২০-২৫ জনকে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারদের রোববার বিকেলে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়।

পুলিশের আদালত পরিদর্শক (কোর্ট ইসস্পেকটর) মো. শহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

6h ago