জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ‘উপযোগী নয়’ বলে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না ইইউ

বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য অনুকূল নয় বলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তাদের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠাবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

চলতি বছরের জানুয়ারি ও জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরকারী ইইউ অনুসন্ধানী মিশনের মূল্যায়নের বিষয়টি উল্লেখ করে গতকাল নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছে ইইউ।

জুলাই মাসের সফরে ছয় সদস্যের ইইউ অনুসন্ধান মিশন নির্বাচন কমিশন (ইসি), স্বরাষ্ট্র, আইন, তথ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সুশীল সমাজ প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন অংশীজনের ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ সংক্রান্ত একটি চিঠি নির্বাচন কমিশন এবং একটি অনুলিপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।'

ইইউ অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের সময় বিশেষজ্ঞদের একটি ছোট দল পাঠাবে।

নির্বাচনকালীন প্রশাসন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি যখন মতবিরোধে তখন ইইউ এই বিবৃতি দিয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, অন্যদিকে বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বলেছে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে আসছে। চলতি বছরের ২৪ মে তারা ঘোষণা দিয়েছে যারা ভোট কারচুপি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব এবং তার সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ২০২১ ও ২০২৩ সালের ডেমোক্রেসি সামিটেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।

একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি বেশ বিস্ময়কর যে, ইইউ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অন্যান্য বিদেশি নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ দলকেও বাংলাদেশে না আসার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে।'

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও পর্যবেক্ষণ দল পাঠায়নি ইইউ।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টও বাংলাদেশে 'মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি' নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

প্রস্তাবটিতে বিশেষ করে দুই মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানের কারাদণ্ডের নিন্দা জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে এই রায় বাতিল, তাদের দুজনের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহার এবং অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে সংস্থাটির নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়া এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সংস্থাগুলোর বিদেশি অনুদান গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি এম হুমায়ুন কবির এর আগে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইইউ ২০১৮ সালের নির্বাচনের জন্য পর্যবেক্ষক পাঠায়নি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গত দুটি নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত সমালোচনামূখর ছিল। তাই আসন্ন নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'

তিনি বলেন, এলডিসি পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর পরিবর্তিত বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

13h ago