২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

মৃত্যুর আগে রায়ের বাস্তবায়ন চান পটুয়াখালীর মামুনের মা-বাবা

‘মৃত্যুর আগে যেন ছেলে হত্যার বিচারের রায় কার্যকর দেখে যেতে পারি’—এমন আকুতি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আলীপুরা গ্রামের মামুন মৃধার বাবা মোতালেব মৃধা ও মা মোর্শেদা বেগমের।

ছেলের শোকে মানসিক আর শারীরিকভাবে ভেঙে পরায় শরীরে নানা রোগ ধরেছে। হারিয়ে গেছে কর্মক্ষমতা। অর্থ কষ্টও যোগ হয়েছে এর সঙ্গে। ওষুধ-পথ্য কেনাসহ পরিবারের খরচ চালানো এখন কষ্টকর।

তবু তাদের শেষ ইচ্ছা মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচারের রায়ের বাস্তবায়ন দেখে যাওয়া।

'মৃত্যুর আগে যেন ছেলে হত্যার বিচারের রায় কার্যকর দেখে যেতে পারি'—এমন আকুতি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আলীপুরা গ্রামের মামুন মৃধার বাবা মোতালেব মৃধা ও মা মোর্শেদা বেগমের।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় গ্রেনেড হামলায় মামুন মৃধা নিহত হন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলের নেতা শেখ হাসিনার জনসভায় ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী।

দীর্ঘ ১৪ বছরে পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত ওই মামলার রায় দেন। মামলায় ৪৯ জনকে আসামি করা হয়।

রায়ে হামলায় জড়িত থাকার দায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান মামুন পড়াশোনা করে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাবেন—এই আশায় ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকার কবি নজরুল কলেজে। ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার মঞ্চের খুব কাছেই ছিলেন মামুন। গ্রেনেড হামলায় মাথায় স্প্লিন্টার ঢুকে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। স্বজনেরা বিভিন্ন হাসপাতাল খুঁজে অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার মরদেহ শনাক্ত করেন। ২৩ আগস্ট গ্রামের বাড়িতে মামুনের লাশ দাফন করা হয়।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মামুন মৃধার কবর। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

৫ ভাইবোনের মধ্যে মামুন ছিলেন বড়। ২০০৩ সালে স্থানীয় আলীপুর বি বি রায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে মামুন কবি নজরুল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর চাচা আলী হোসেনের দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করতেন। এ ছাড়া, টিউশনি করে বাড়িতে টাকাও পাঠাতেন।

দশমিনার আলীপুর গ্রামে কথা হয় মামুনের বাবা মোতালেব মৃধা ও মা মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে। নিয়ে যান ছেলের কবরের পাশে। সেসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।

মামুনের ৪ বোনের বিয়ে হয়েছে। মা-বাবা বাড়িতে থাকেন। অসুস্থ মা-বাবার সেবার জন্য ছোট মেয়ে তুলি থাকেন তাদের সঙ্গে। মামুন নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা তাদের ১০ লাখ টাকা দেন। তার এক বোন ঝুমুরের বিয়ের সময় দিয়েছিলেন ২৫ হাজার টাকা। অপর বোন রুবিনা আক্তার ও তুলিকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে ধারদেনা করে।

মামুনের বাবা মোতালেব মৃধা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। পটুয়াখালী সোনালী ব্যাংক শাখায় জমা রাখা ওই টাকার মুনাফা হিসেবে মাসে ৮ হাজার ৬০০ টাকা করে পান। সেই টাকা দিয়েই চলছে তাদের সংসার।

তিনি বলেন, 'আমি এখন কাজ করতে পারি না। ব্যাংক থেকে যে টাকা পাই তা দিয়েও সংসার চলে না। আমাদের ২ জনের জন্য মাসে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকার ওষুধ-পথ্য কিনতে হয়। এক মেয়ে ও নাতনী থাকে আমাদের সঙ্গে।'

'ছোট মেয়ে তুলি বিএ পাস করেছে। তার চাকরির জন্য অনেকের কাছে ধরনা দিয়েছি। ওর চাকরি হলেও নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম,' যোগ করেন তিনি।

মামুনের মা মোর্শেদা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার মামুনকে যারা মেরে ফেলল, সেই হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু, রায় এখনো কার্যকর হয়নি। মৃত্যুর আগে আমরা এ রায়ের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারলে কিছুটা হলেও শান্তি পেতাম।'

মামুনের চাচা মনির মৃধা বলেন, '২১ আগস্ট আসলেই আওয়ামী লীগ নেতারা এসে মামুনের কবরে ফুল দেন, মিলাদ মাহফিল করেন। কিন্তু, সারা বছর মামুনের পরিবার কেমনে চলে সে খবর কেউ রাখেন না।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus sits with BNP delegation over reform commissions

BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir is leading the six-member delegation at the State Guest House Jamuna.

1h ago