২৩ বছর পর মেয়েকে পেয়ে আগেই ঈদ এসেছে খয়বার-মোমেনার বাড়িতে
প্রায় ২ যুগ আগে নিখোঁজ হওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে যে বেঁচে আছে, তার সঙ্গে আবার কখনো দেখা হবে- তা স্বপ্নেও ভাবেননি ঝিনাইদহের খয়বার আলী ও মোমেনা খাতুন। সেই মেয়ে ফজিলা খাতুন বাড়িতে ফিরেছে। গ্রাম ভেঙে মানুষ এসেছে তা দেখতে।
সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের পুনর্মিলনের এই মধুর ঘটনা ঈদের আগেই ঈদ নিয়ে এসেছে বৃদ্ধ খয়বার-মোমেনার বাড়িতে।
এখন ৫৫ বছর বয়সী ফজিলা খাতুনের নিজের মেয়েদের বয়স যখন ২ কিংবা ৩ তখন তার ১ মেয়ে ও স্বামী মারা যান। সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া ফজিলা মেয়েদের এতিমখানায় রেখে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ফজিলা ২০০০ সালের দিকে নিখোঁজ হয়ে যান। অন্য ২ মেয়ে তখন কিশোরী। এতিমখানায় থাকতে খবর পান মা হারিয়ে গিয়েছেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর মাকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা।
স্বজন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফজিলা খাতুন ঘটনাচক্রে কোনোভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরায় পৌঁছে যান। ২ মেয়েসহ স্বজনেরা অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাঁর সন্ধান পাননি। এভাবে কেটে যায় ২৩টি বছর। ৩-৪ মাস আগে তার ২ মেয়ে ফিরোজা আক্তার ও পিঞ্জিরা আক্তার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খবর পান যে তাদের মা বেঁচে আছেন ।
শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্যরেখায় আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সহযোগিতায় নিখোঁজ ফজিলা খাতুনকে তার ২ মেয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় সেখানে এক আবেগঘন এক পরিবেশ তৈরি হয়।
আজ রোববার সকালে ফজিলা খাতুনকে ঝিনাইদহ সদরের মহারাজপুর ইউনিয়নের বিষখালী গ্রামে বাবা-মায়ের বাড়িতে আনা হয়। প্রায় ২ যুগ পর সন্তানকে কোছে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন খয়বার-মোমেনা দম্পতি। সে আবেগ স্পর্শ করে সেখানে ভিড় করা আশপাশের আরও অনেককে।
ফজিলা খাতুন খয়বার-মোমেনা দম্পতির বড় সন্তান। সন্তানকে ফিরে পেয়ে মা মোমেনা খাতুন বলেন, 'আমার ঘরে আজকে ঈদের আনন্দ। এই জীবনে মেয়েকে আবার দেখতে পাবো- তা কখনো ভাবিনি।'
বাবা খয়বার আলীও বলেন, 'সব আল্লার ইচ্ছা। আমার ৫ সন্তানের মধ্যে ফজিলা সবার বড়। এই আনন্দ প্রকাশ করার ভাষা নেই।'
এ সময় সেখানে উপস্থিত ফজিলার বড় মেয়ে ফিরোজা আক্তার জানান, 'বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা এতিমখানায় থাকা অবস্থায় মায়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাই। তাকে খুঁজে পেতে সবকিছু করেছি আমরা। কিন্তু একসময় সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।'
আরেক মেয়ে পিঞ্জিরা আক্তার জানান, মাকে আনতে তিনি ও তার স্বামী হালিম শেখ আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তে গিয়েছিলেন।
যার মারফত ফজিলা খাতুনের ত্রিপুরায় থাকার খবর পেয়েছিলেন ২ বোন, সেই মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুরশীদ আলম বলেন, 'ফজিলাকে খুঁজে না পেয়ে দরিদ্র এই পরিবারটি হাল ছেড়ে দিয়েছিল। মাকে খুঁজে পেতে সহযোগতিার জন্য তার ২ মেয়ে প্রায়ই ইউনিয়ন পরিষদে আসত। শেষ পর্যন্ত মা-সন্তানের মিলন হয়েছে। এটা খুব আনন্দের ব্যাপার। এমন একটি ঘটনার সঙ্গে থাকতে পেরে আমরাও আনন্দিত।'
Comments