নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে…

কালিমাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ্‌ চাহিরে। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

এখান থেকে ১২৩ বছর আগে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রচিত 'নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে' শীর্ষক প্রকৃতিপর্বের একটি গানে রবিঠাকুর গ্রামবাংলার বর্ষার যে চিত্রকল্প এঁকেছিলেন, তা যেন আজও সমান প্রাসঙ্গিক।

আকাশে ধূমল মেঘের ভেলায় নদী-মেখলা শ্যামলী নিসর্গের এই বদ্বীপের সবখানে বর্ষার আগমন একইসঙ্গে চিরচেনা ও বিপুল প্রত্যাশিত।

আকাশে গুড়গুড় মেঘের ডাক। থেকে থেকে বিজলি চমক। আবার কোনোরকম ইশারা না দিয়েই ঝমঝম করে নেমে পড়া বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে আসা মাঠ-ঘাট-দিগন্ত—এই তো বর্ষার প্রকৃত রূপ।

পঞ্জিকার পাতায় আজ বাংলার দ্বিতীয় ঋতু বর্ষার প্রথম দিন। তবে এর ২ দিন আগেই গত ১৩ জুন রোদজ্বলা মধ্যদুপুরে বরিশাল শহর থেকে ভেতরের একটি সড়ক ধরে ঝালকাঠি সদরের ভিমরুলি বাজারের দিকে যাওয়ার পথে বর্ষার চিরায়ত এই বৈশিষ্ট্যের দেখা মিলল।

খালের পানিতে ঝোড়ো হাওয়ার মিতালি। ছবি: সারোয়ার হোসেন/স্টার

গাড়িতে পথ পাড়ি দিতে দিতেই ভুসোকালির মতো কালো মেঘে ছেয়ে গেল আকাশ। আঁধার নেমে এল চারদিকে। সড়কের দুপাশে লাগানো প্রাচীন গাছগুলো দুলে উঠল দমকা হাওয়ায়। এরই এক পাশ দিয়ে বয়ে চলা নাম না জানা খালের পানিতে বাতাসের মিতালি তৈরি করল অপার্থিব দৃশ্য।

এ অবস্থায় আরও খানিকটা পথ পেরিয়ে রাস্তার ডান পাশের একটি খোলা মাঠ থেকে আকাশের দিকে চোখ যেতেই মনে হলো, রবীন্দ্রনাথ যেন এমন কোনো দৃশ্য দেখেই লিখেছিলেন, 'নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।'

আবার ওই মাঠেই চরে বেড়ানো কয়েকটি গরু মনে করিয়ে দিল গানটির আরও কয়েকটি পঙতি- 'ওই ডাকে শোনো ধেনু ঘন ঘন, ধবলীরে আনো গোহালে/…এখনই আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।'

গাড়ির কাঁচে বৃষ্টির হানা। ছবি: সারোয়ার হোসেন/স্টার

এদিকে রাস্তার অন্য পাশে একরত্তি এক খালে কোনো খেয়া না থাকলেও ওই দৃশ্যের সঙ্গে গানের অন্য চরণগুলো মেলাতে কষ্ট হলো না। রবীন্দ্রনাথ যেখানে বলেছেন, 'পুবে হাওয়া বয়, কূলে নেই কেউ, দু কূল বাহিয়া উঠে পড়ে ঢেউ/দরো-দরো বেগে জলে পড়ি জল ছলো-ছল উঠে বাজি রে।'

ততক্ষণে দু-কূল ভাসানো অঝর বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। পঞ্জিকার পাতা ওলটানোর আগেই যেন নেমে এসেছে বর্ষা।

তবে বাকি পথ যেতে যেতে আউশের কোনো খেত চোখে পড়ল না।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

3h ago