বর্ষা উপভোগ করতে ঢাকার কাছেই ডে ট্যুরের ৫ গন্তব্য
বর্ষা মৌসুমে কোথাও ঘুরতে গেলে প্রকৃতির আসল সবুজ সুশোভিত রূপ দেখতে পাওয়া যায়। তবে ঢাকার কর্মময় জীবন থেকে চাইলেই ছুটি নেওয়া যায় না। সেজন্য দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসার মতো জায়গা খোঁজেন সবাই।
বর্ষায় ঢাকার আশপাশে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানোর মতো এমন ৫টি জায়গার কথা আজ জানাব, যেগুলোতে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা সম্ভব।
মাওয়া
বর্ষাকালে নদীর সৌন্দর্য আরও আকর্ষণীয় রূপে ধরা দেয়। বর্ষায় পদ্মা নদী হয়ে উঠে প্রশান্তি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শ্বাসরুদ্ধকর ক্যানভাস।
বর্ষার একটি দিন প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করার জন্য পদ্মাপাড়ের মাওয়া হতে পারে আদর্শ জায়গা। এখানে বসে মাথার ওপর মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মধ্যে বর্ষায় প্লাবিত পদ্মার উত্তাল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় পদ্মাপাড়ের মাওয়া ঘাটে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায়। পদ্মার পাড় ধরে আপনি অনেক দূর হাঁটতে পারবেন, চাইলে নৌকা বা স্পিডবোটে করেও ঘোরা যায়। আর আছে সুস্বাদু ইলিশের আকর্ষণ। মাওয়া ঘাট ও এর আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য রেস্টুরেন্টে আপনি ইলিশ ও নানা পদের ভর্তা উপভোগ করতে করতে পারবেন।
বর্ষায় পদ্মা সেতু দিয়ে পার হওয়াটাও কম কাব্যিক অনুভূতির জন্ম দেয় না। গাড়িতে জানালার পাশে বসে পছন্দের গান ছেড়ে দিয়ে সেতু পার হওয়ার যে অনুভূতি, সেটি নিঃসন্দেহে দারুণ।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, গাজীপুর
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ঢাকার খুব কাছেই অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি উদ্যান। ঢাকার খুব কাছে হওয়া সত্ত্বেও এই উদ্যানটিতে অনেকেরই যাওয়া হয় না। গাজীপুরের জয়দেবপুরের ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে এই উদ্যানটি গড়ে উঠেছে। প্রচুর গজারি গাছ থাকায় এটিকে গজারির গড় নামেও ডাকা হয়।
উদ্যানে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আপনি সবুজের সমারোহে মিশে যাবেন। লম্বা লম্বা গাছের কারণে উদ্যানজুড়ে সার্বক্ষণিক ছায়া থাকে। বর্ষায় ভেজা গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে যখন সূর্যের আলো উঁকি দেয়, তখন এক অনন্য দৃশ্য তৈরি হয়।
উদ্যানের সুন্দর আঁকাবাঁকা পথ ধরে ইচ্ছামতো হাঁটতে পারেন কিংবা পিকনিক উপভোগ করতে পারেন, অথবা শুধু প্রকৃতির মাঝে বসে থাকতে পারেন। আপনি যদি প্রকৃতি উপভোগ করতে চান, তাহলে এই উদ্যান একটি সুবর্ণ সুযোগ। যারা নাগরিক কোলাহল থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি চান, তাদের জন্য ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান আদর্শ একটি জায়গা।
ছুটি রিসোর্ট, গাজীপুর
বৃষ্টির দিনে ১ দিনের ছুটি উপভোগ করার জন্য ঢাকার খুব কাছেই গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত ছুটি রিসোর্টে ঘুরে আসতে পারেন। গ্রামীণ পরিবেশে তৈরি এই রিসোর্টে অবকাশ যাপনের জন্য আছে নৌকা ভ্রমণ ও বৃক্ষের বনে তাঁবু টানিয়ে থাকার ব্যবস্থা। লেকে নৌকা ভ্রমণের সময় শান্ত পানির চারপাশের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
বৃষ্টি ও ঝিরিঝিরি বাতাসের মধ্যে বনে তাঁবু খাটিয়ে কিছুটা সময় উপভোগের যে আনন্দ, সেটি অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। এ ছাড়া বাঁশের তৈরি ছোট ছোট কুঁড়েঘরে বসেও বৃষ্টি ও বর্ষার আনন্দ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
ছুটি রিসোর্টে ২টি পিকনিক স্পট আছে। এখানে বসে আপনি দুপুরের খাবার খেতে পারবেন আর প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়াও আছে ফল, সবজি ও ফুলের বাগান, সঙ্গে আছে গ্রামীণ পিঠা খাওয়ার ব্যবস্থা। পাখির কলরব, জোনাকির আলো এবং ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আপনাকে গ্রামীণ পরিবেশের কথাই বারবার মনে করিয়ে দেবে। ভরা পূর্ণিমা উপভোগ করার জন্যও ছুটি রিসোর্ট একটি আদর্শ জায়গা।
জলসিঁড়ি সেন্ট্রাল পার্ক
ঢাকা থেকে মাত্র ১ ঘণ্টার দূরত্বে পূর্বাচলে অবস্থিত জলসিঁড়ি সেন্ট্রাল পার্কে গেলে বিস্তৃত সবুজ মাঠ, দীর্ঘ ও প্রসারিত মনোরোম লেক, প্রাকৃতিক উদ্যান এবং অনবদ্য ওয়াকওয়ে উপভোগ করতে পারবেন।
একাকী, বন্ধু কিংবা পরিবারসহ ১ দিনের জন্য এই পার্কে ঘুরতে যেতে পারেন। পার্কে গিয়ে যদি বৃষ্টির দেখা মেলে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে বৃষ্টির আবহ মিলে যে অনুভূতি তৈরি হবে, সেটি আপনার দিনটিকে সার্থক করার জন্য যথেষ্ঠ।
শিশুদের জন্য রয়েছে থ্রিডি ভিশন থিয়েটার ও কিছু খেলনা রাইড, আছে বড় খোলা মাঠ। পার্কের মনোরোম সৌন্দর্য ও চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লেক আপনার মনে এক অসাধারণ অনুভূতির জন্ম দেবে, সন্দেহ নেই।
পানাম নগর, সোনারগাঁও
ঢাকার ইট-কাঠের ব্যস্ত নগরী থেকে চোখ সরাতে চাইলে শহরের অদূরে সোনারগাঁওয়ের পানাম নগর হতে পারে আদর্শ স্থান। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর, যা এখনো সেই সময়কে ধরে রেখেছে। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ইটের ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। বৃষ্টির দিনে এই গৌরবময় ঐতিহ্যের স্থানটিতে ভ্রমণ যেন আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
বর্ষায় পানাম নগরের শতাব্দী প্রাচীন ভবনগুলো দেয়াল ভিজে যায় এবং দেয়ালের বিভিন্ন চিহ্ন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে ইতিহাস চোখের সামনে আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়। আপনি যখন ছাতা হাতে নিয়ে বিশাল পুকুরের কাছ দিয়ে হাঁটবেন, তখন বৃষ্টি এবং আশেপাশের মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি প্রশান্তিকর ও অতুলনীয় অনুভূতি দেবে।
অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল
Comments