পাইরেসির কারণে বন্ধ হচ্ছে নিউমার্কেটের জিনাত বুক 

জিনাত বুক। ছবি: শেখ এনাম/স্টার

রাজধানীর নিউমার্কেটের সুপরিচিত বইয়ের দোকান জিনাত বুক সাপ্লাই। ১৯৬৩ সাল থেকে দোকানটি বইপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়। তবে, আগামী ১ মে থেকে দোকানটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

জিনাত বুকের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সৈয়দ আবদুল মালেক। ১৯৯৪ সালে তিনি মারা যাবার পর দোকানের দায়িত্ব নেন ছেলে সৈয়দ ফয়সাল (৬৭)।

দোকানটি বন্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ হিসেবে বই পাইরেসির কথা জানিয়েছেন ফয়সাল।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাবা ১৯৬৩ সালে যখন দোকানটি খুলেছিলেন, তখন দেশে বিনোদনের সুযোগ খুব কম ছিল। পরে রেডিও এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন চালু হলে সেটিও ছিল সীমিত আকারে। আমার এখনো সেই দিনগুলোর কথা মনে আছে। তখন আমরা প্রতিদিন সকালে বইয়ের দোকানে পৌঁছে দেখতাম বাইরে বিশাল লাইন ধরে মানুষ অপেক্ষা করছেন।'

ফয়সাল গত ৪৭ বছর ধরে দোকান দেখাশোনা করেছেন। তিনি জানান, আগে প্রতিদিন যে পরিমাণ বই বিক্রি হতো, গত কয়েক দশক ধরে বিশেষ করে গত কয়েক বছরে প্রতি ৩ মাসে সেই পরিমাণ বই বিক্রি হচ্ছে।

জিনাত বুকের নিবন্ধিত আমদানিকারক ছিল ২৫টি। সর্বশেষ মাত্র ১ জন আমদানিকারকের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বইয়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।

ফয়সাল বলেন, 'করোনাভাইরাস মহামারিতে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে এবং ডিজিটাল মাধ্যমে বই পড়তে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।'

বই পাইরেসির ব্যাখ্যা দিয়ে ফয়সাল বলেন, 'আমাদের দোকানের সব বই আমদানিকৃত মূল কপি। করের কারণে যখন দেশে বইয়ের দাম বেড়ে গেছে, পাঠকরা তখন কম দামে বই পেতে চেয়েছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে কর প্রযোজ্য নয়। কিন্তু আদালতে এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি হতে যে অর্থ ও সময় নষ্ট হয়েছে, তা বই বিক্রির আয় থেকে অনেক বেশি। এ সময়ে স্টকে থাকা বইগুলোও নষ্ট হয়ে যায়।'

তিনি জানান, এর মধ্যেই বইগুলোর বেশিরভাগই পাইরেটেড হয়ে কম দামে বিক্রি হয়। যদি গ্রাহকরা জিনাত বুকের মতো দোকান থেকে বেশি দামে আসল বই কিনতে চান, সেজন্য প্রয়োজন ডিজিটাল প্রচারণা এবং অনলাইন অর্ডার নিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো আর্থিক সামর্থ্য বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা। এর কোনোটিই জিনাত বুকসের নেই।

ফয়সাল বলেন, 'আমাদের কর্মীরা ৩১ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে কাজ করছেন। তারা ক্রেতাদের কাছে সরাসরি বই বিক্রি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আমি তাদের ডিজিটাল মাধ্যমে বই বিক্রি করতে বলতে পারি না। যদি তা পারতাম, আরও হয়ত ৬-৭ বছর দোকান চালানো যেত।'

'গত ৯ বছরে আমার ২৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। প্রতি মাসে ৫০-৭০ হাজার টাকা লোকসান হয়। বই বিক্রিই আমাদের প্রধান ব্যবসা। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এটা অনেক বড় ক্ষতি।'

অভিজ্ঞতা থেকে ফয়সাল বলেন, ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী পাঠকরা বই পড়েন। তরুণদের মধ্যে পড়ার আগ্রহ অনেক কমে গেছে।

পাঠকরা অবশ্য জিনাত বুক বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, 'জিনাত বুক এতদিন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে ছিল।'
 
বুকওয়ার্ম বাংলাদেশ বলছে, 'ঢাকার প্রথম অরিজিনাল বইয়ের দোকানগুলোর একটি নিউমার্কেটে। আমরা নিউমার্কেটে ঢুকে জিনাত বুকসে যাওয়ার পথ কখনোই ভুলব না।'
 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus to address nation on eve of Eid-ul-Azha

The nationwide address is scheduled for 7:00pm

1h ago