২ গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ৮

জনশূন্য রোয়াংছড়ি-রুমার বম ও খিয়াং পাড়া

ভয়ে-আতঙ্কে বেশ কিছু পরিবার রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। ছবি: স্টার

বান্দরবানের রোয়াংছড়ির ও রুমা উপজেলার সীমান্তবর্তী খামতাং পাড়ায় গত শুক্রবার দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়। এ ঘটনার পর থেকে এসব এলাকার বাসিন্দারা ভয়ে-আতঙ্কে জীবন বাঁচাতে নিজেদের ভিটামাটি- বসতবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন।

তাদের অনেকেই রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলা সদরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, গত ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর এবং পরদিন ৭ এপ্রিল ভোরে দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে ৮ জন নিহত হয়। এরপর থেকে পুরো এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ওই ঘটনার পর থেকেই খামতাং পাড়ার আশেপাশের এলকার বম, খিয়াং, মারমা পাড়াগুলোর বাসিন্দারা ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

গোলাগুলি ও হতাহতের ঘটনার পর গ্রামবাসীদের মধ্যে ২০ পরিবারের ৬৪ জন রুমা সদরের বম সোশ্যাল কাউন্সিল হলরুমে এবং ৪৯ পরিবারের ১৯২ জন রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। 

আজ রোববার সকালে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পাইংক্ষ্যং পাড়া থেকে শিশু ও বৃদ্ধসহ ৬২ পরিবারের ২১০ জন ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় ৯-১০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছান।

স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মুন সাং বম (৩২) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পাইংক্ষ্যং পাড়া থেকে ৯২টি বম ও ১টি মারমা পরিবার সকাল ১১টায় রওনা দেয় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ চাঁদের গাড়িতে রোয়াংছড়িতে পৌঁছেছেন।

পাইংক্ষ্যং পাড়ার কারবারি (পাড়া প্রধান) পিটর বম ডেইলি স্টারকে বলেন,  'পাড়ার ৬২ পরিবারের ২১০ জনের একটি দল প্রথমে রোয়াংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছায়। শুনেছি আমাদের পাড়াসহ পাশের ক্যপ্লং পাড়া থেকেও আরও ৪০-৫০ পরিবার আসছে।'

সরেজমিনে রোয়াংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরিবারগুলো স্কুলে পৌঁছেছে। সেখানে থাকার ব্যবস্থা করছেন তারা।

পাইংক্ষ্যং পাড়া থেকে আসা সামং থান বম (৪৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের সঙ্গে আসা প্রায় ১৮ পরিবার উপজেলা ও জেলা সদরে তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাকি ৬০ পরিবার আমাদের সঙ্গে এখানে আছে।' 

রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবার সমন্বয়ে সার্বিক সহযোগিতায় রোয়াংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যারা আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের জন্য খাবার, কাপড়সহ প্রয়োজনীয় সবকিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে।' 

জানতে চাইলে নিরাপদ আশ্রয় আসা নারীরা ডেইলি স্টারকে বলেন, বাড়িতে তারা গৃহপালিত গরু, ছাগল, মুরগী, চাল, ধানসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ফেলে চলে এসেছেন।

যোগাযোগ করা হলে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার (চলতি দায়িত্ব) নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খামতাংপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ ৮ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার পর ভয়ে আশেপাশের কয়েকটি পাড়া থেকে ৪৬৬ জনের বেশি মানুষ রুমা ও রোয়াংছড়ি সদরে আশ্রয় নিয়েছেন।'

তাদের মধ্যে রুমায় ৬৪ জন, রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে খিয়াং  সম্প্রদায়ের ১৯২ ও বম সম্প্রদায়ের ২৫০ জন আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান তিনি। 

তাদের খাবার, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই পরদিন সকালে খামতামপাড়ায় ২ গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই এলাকা থেকে ৮ জনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

BNP hosts discussion on first anniversary of July uprising

Leaders recall sacrifices, call for unity at Dhaka gathering

46m ago