চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ও কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণার সিদ্ধান্ত

ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা ও কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এই এলাকাকে সরকার মাদকপ্রবণ অঞ্চল ঘোষণা করবে। 

আজ রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কমিটি এই এলাকাকে বাংলাদেশে মাদক প্রবেশের সবচেয়ে বড় রুট বলে মনে করছে। কমিটির আগের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। 

আজকের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা এবং কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করার বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিটির ১৫ জানুয়ারির বৈঠকে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ্ আল মাসুদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গ তোলেন। 

মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও, উৎপাদনকারী দেশগুলোর কাছাকাছি অবস্থান, ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ মাদকে আক্রান্ত উল্লেখ করে আবদুল্লাহ্ আল মাসুদ বলেন, 'মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ, ভারত থেকে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল ও ইনজেক্টিক ড্রাগের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটে।' 

পরে তিনি সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক চোরাচালান রোধকল্পে সীমান্ত নিশ্চিতকরণ, স্যাটেলাইট মনিটরিং প্রযুক্তি স্থাপন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন, চট্টগ্রাম জেলা ও কক্সবাজার এলাকাকে মাদকপ্রবণ অঞ্চল ঘোষণা করার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।

বৈঠকে ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, 'রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যা করছে, তা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে করছে। এরা রাতে ওপারে যায় এবং তাদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাদকপাচার করছে। যে মাদক উদ্ধারের কথা জানা যায়, তা মূলত ২-৩ শতাংশ মাত্র। এতে সহজেই অনুমান করা যায় যে কী বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সেখানে সম্পৃক্ত।'

'এলাকাটি মাদকের অভয়ারণ্য' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এটিকে কঠোরভাবে দমন না করলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। সেখানে মসজিদের ইমামও মাদকপাচারের সঙ্গে জড়িত। এই এলাকায় দিনের বেলায় এক চিত্র, রাতে তা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এ অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে স্থানীয় লোকও সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে।'

কোনাপাড়া ক্যাম্প ও নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের চলাচল এবং যোগাযোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গারা আলাদা জনগোষ্ঠী, তাদের সংস্কৃতি আলাদা। এরা এ দেশে আশ্রয়গ্রহণকারী। তাদের অপরাধের বিচার দেশের প্রচলিত আইনে না করে, তাদের জন্য আলাদা আইনি ব্যবস্থা রাখা দরকার, যেন অপরাধ সংঘটিত করে বের হয়ে যেতে না পারে।'

'মাদকের বিচারকাজে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করা দরকার, যেন অন্যরা ভয় পায়, বুঝতে পারে যে বেআইনি কাজ করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা আছে,' যোগ করেন তিনি।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার পুনরুল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'মাদকপাচারের সঙ্গে, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যিনিই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। মাদক ব্যবসায়ী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রীর থেকে শক্তিশালী নয়।'

তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, এখানে বাস করতে হলে আমাদের দেশের আইন মানতে হবে। আমাদের রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়—এমন কর্মকাণ্ড থেকে তাদের দূরে থাকতে হবে। এসব বন্ধ না করলে হয় তারা তাদের দেশে ফেরত যাবে, না হয় অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের ভাসানচরে পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করা হবে।'

পরে বৈঠকে কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'মাদকপাচারের বড় রুট হিসেবে এ পয়েন্টটি চিহ্নিত হয়ে আছে।

Comments

The Daily Star  | English
Banking sector crisis

Why is the banking sector crisis so deep-rooted?

The regime-sponsored immorality to protect or pamper the financial gangsters not only eroded the future of the banking sector, but also made the wound too difficult to recover from.

4h ago