শরীয়তপুর

৫৫১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার, কলাগাছের মিনারে শিশুদের শ্রদ্ধা

শরীয়তপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কলাগাছ দিয়ে তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে শিক্ষর্থীরা। ছবি: জাহিদ হাসান রনি/স্টার

শরীয়তপুরে ৫৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। এ কারণে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ৫৯ নং দক্ষিণ বালুচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিশু শিক্ষার্থীরা খালি পায়ে জবা, গাঁদা ও ঘাস ফুল নিয়ে এসেছে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। জাতীয় সংগীত ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে তাদের শহীদ দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। পতাকা উত্তোলন শেষে শিশুরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাদের মধ্যে বাংলা ভাষায় সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, একুশের কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

এই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাজরিয়ান আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলে, 'ভাষা শহীদরা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন বলেই আজ আমরা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারি। আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। প্রতিবছর আমরা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানাই। যদি এখানে একটি শহীদ মিনার থাকতো, তাহলে খুব সুন্দরভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে পারতাম।'

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকেয়া বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বিদ্যালয়ে স্থায়ী কোনো শহীদ মিনার নেই। শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর নিজেদের বাড়ি থেকে কলাগাছ নিয়ে আসে, তারপর মাটি খুঁড়ে কলাগাছ বসিয়ে পোস্টার-কাগজ মুড়িয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে। আমরা তাদের এই কাজে সহযোগিতা করি। শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ফুল গেঁথে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শিক্ষার্থীরা এই অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের কাজটি খুব আনন্দের সঙ্গেই করে।'

বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। তবে এখানে যেহেতু আর্থিক বিষয় জড়িত, আশা করছি আগামী বছর শিক্ষক, অভিভাবক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারব।' 

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের ৬ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মোট ৬৯৮টি। এরমধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ১৪৭টিতে। বাকি ৫৫১টিতে শহীদ মিনার নির্মাণ আজও সম্ভব হয়নি।

শরীয়তপুর সদরে ১২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫টিতে শহীদ মিনার আছে, ডামুড্যায় ৫৬টির মধ্যে আছে ৯টি, গোসাইরহাটে ৯৮টির মধ্যে আছে ৯২টি, জাজিরায় ১২৩টির মধ্যে আছে ৪টি, নড়িয়ায় ১২৩টির মধ্যে আছে ১৭টি এবং ভেদরগঞ্জে ১৫৯টির মধ্যে ২০টিতে শহীদ মিনার আছে।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এরশাদ উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, '৬৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৫১টিতে শহীদ মিনার নেই। এসব বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, বাঁশ ও ককশিট দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদ দিবস পালন করছে।'

যে বিদ্যালয়গুলোতে স্থায়ী শহীদ মিনার নেই, সেগুলোতে শহীদ মিনার স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শরীয়তপুরে শহীদ মিনার নেই এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানীয়দের সহযোগিতায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। আশা করছি আগামী বছর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনারে শহীদ দিবস পালন করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Industrial output soars, but where are the jobs?

Over the past decade, more and more industries have sprung up across the country, steadily increasing production. But while output rose, factories did not open their doors to more workers.

10h ago