‘মাছ খেতে চাইলে চাল-ডাল কেনা হবে না’

নদীতে মাছ সংকট
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার জোরগাছ এলাকায় ব্রহ্মপুত্রে আশানুরূপ মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

মোনা দাস (৪৮) তার ৪ সঙ্গী—নিপেন দাস (৫০), সুবল দাস (৪৪), প্রবল দাস (৩৪) ও নিরাময় দাসকে (৩০) নিয়ে নৌকায় চড়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মাছ ধরেন। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করে ৭-৮ কেজি মাছ ধরতে পারেন।

গত ৬-৭ বছর ধরে মাছের সংকট দেখতে পারছেন তারা। কেননা, এক যুগ আগেও তারা ৫০-৬০ কেজি পেতেন।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রপাড়ে জোরগাছ এলাকার মোনা দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারাদিন পরিশ্রম করে ৫০০-৬০০ টাকা পাই। এখান থেকে জাল ও নৌকা মেরামতের খরচ রাখতে হয় ২০০ টাকা। বাকি ৪০০ টাকা দিয়ে সংসার চালাতে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে।'

'নিজে মাছ ধরলেও পরিবারকে মাছ খাওয়াতে পারি না। আমরা মাছ খেতে চাইলে চাল-ডাল কেনা হবে না। পৈতৃক পেশা মাছধরা চেড়ে অন্য কাজ করতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড়ের দোয়ানী এলাকার মৎস্যজীবী আফতাব আলী (৫৬) হতাশ হয়ে তিস্তাপাড়ে বসে সময় কাটান। তিস্তায় মাছ মিলছে না। তার দলে ৫ জন আছেন। সারাদিন নদীতে জাল ফেলে ৬-৭ কেজি মাছ পাচ্ছেন। যে টাকা আয় হচ্ছে তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৩ যুগ ধরে তিস্তায় মাছ ধরছি। এ বছরের মতো মাছের আকাল আগে কখনো দেখিনি। মাছ ধরাই অভ্যাস। অন্য পেশায় মন দিতে পারছি না।'

তার আক্ষেপ, তিস্তায় সারা বছর পানিপ্রবাহ থাকে না। এ কারণে মাছের প্রজনন আশানুরূপ হয় না। এক শ্রেণির মৌসুমি মাছ শিকারি চায়না জাল দিয়ে মাছের পোনা শিকার করেন। সব মিলিয়ে মাছের সংকট।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার তিস্তাপাড়ে বজরা এলাকার মৎস্যজীবী নারায়ণ চন্দ্র দাস (৭৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে তিস্তায় জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা পরতো। মাছ দিয়ে ভাত খেতাম। এখন পরিবারে মাছের তরকারির দেখাই মেলে না। পৈতৃক পেশায় নির্ভরশীল মৎস্যজীবীরা জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।'

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর পাড়ে বড়ভিটা এলাকার মৎস্যজীবী শিবেন দাস (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধরলা প্রায় শুকিয়ে গেছে। যেটুকু পানি আছে তাতে মাছ মিলছে না। জলাশয়ে দিনমজুরির চুক্তিতে মাছ ধরি।'

তিনি মনে করেন, মৌসুমি মাছ শিকারিরা মা ও পোনা মাছ ধরা বন্ধ না করলে নদীতে মাছের আশানুরূপ প্রজনন ঘটবে না।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলায় মাছ ধরে প্রায় ৩০ হাজার মৎস্যজীবী পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের অধিকাংশই দলবদ্ধ হয়ে মাছ ধরেন।

কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালীপদ রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদ-নদীতে সারা বছর আশানুরূপ পানিপ্রবাহ থাকে না। এটা প্রাকৃতিক বিষয়। তবে কিছু মৌসুমি মাছ শিকারি চায়না জাল দিয়ে নদীতে মা ও পোনা মাছ ধরায় মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। মৎস্যজীবীদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়।'

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নদ-নদীতে চায়না জাল দিয়ে মাছধরা বন্ধ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Iran announces new wave of attacks on Israel: state TV

Israel says conducted 'extensive strikes' in Iran's west, while explosions near Tel Aviv, sirens blare across Israel; smoke rises after explosion in Iran’s Tabriz

34m ago