এক কলস পানির জন্য ৪০০ ফুটের টিলা পাড়ি
সরলা তাঁতী। অবসরপ্রাপ্ত চা-শ্রমিক। বয়স ৭০ বছর। তিনি মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাখাইছড়া চা বাগানের উড়িষ্যা টিলায় থাকেন।
স্বামী মারা গেছেন প্রায় ১০ বছর হয়েছে। ছোট ছেলেকে নিয়ে থাকেন তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর সরলার জীবনে চরম অন্ধকার নেমে আসে। আগে স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করতেন।
সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২০০ ফুট ওপরে সরলার মাটির ঘর। চা-শ্রমিকের জীবনের গল্প অনেকেরই জানা, সরলা তাদেরই একজন।
সরলা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভীষণ কষ্টের জীবন। এক কলসি পানির জন্য প্রায় ৪০০ ফুট হেঁটে যাওয়া-আসা করি। টিলায় টিউবওয়েল বা পানির ব্যবস্থা নেই। তাই ঘরের সব কাজের জন্য নিচের একটি মাত্র টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে হয়। বৃষ্টির সময় উঁচু-নিচু এই পথ অনেক বিপজ্জনক থাকে।'
সরলার মতো অনেক মানুষ বাগানে আছে যাদের খোঁজ কেউ নেন না।
সরলার ভাষায়, 'জলের কথা কি কইতাম। হামদের সবচেয়ে বড় কষ্ট হইল পানি। আপনারাই কনতো কই দিয়া পানি পাইমু? এই টিলায় কি নদী-পুকুর আছে? আছে কোনো টিপ কল? এই বাগানের সব জায়গায় টিপ কল হয়ও না।'
'হামদের নিচে একটি মাত্র টিপকল দিয়া জল আনতে হয়। ভাল-মন্দ জানি না। জানতেও চাই না। মন্দ হইলেও কী করার? ওইটাইতো খাইতে হইবে।'
তিনি মনে করেন, চা বাগানের জায়গা, যা দেওয়ার কথা তারা তা দেয় না।
সব সময় টিউবওয়েলে লম্বা লাইন থাকে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, পানি আনার পর শরীরে আর শক্তি থাকে না। সময়মতো রান্না হয় না, খাওয়াও হয় না। রাতের বেলা দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।
আইডিয়া ওয়াশ প্রজেক্টের ম্যানেজার পঙ্কজ ঘোষ দস্তিদার চা বাগানে পানি, পয়ঃব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্নতার চিত্র তুলে ধরে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজঘাট, কালীঘাট ও সাতগাঁও ইউনিয়নের রাজঘাট, লাখাইছড়া ও হুগলীছড়া চা বাগানে ২ হাজার ৩৩৬ পরিবারের মধ্যে ৩৭২ পরিবার নিরাপদ পানি পেয়ে থাকে।'
মৌলভীবাজার সদরে মৌলভী চা বাগানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহনেওয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চা বাগানের ম্যানেজাররা উৎপাদনের দিকে বেশি নজর দিয়ে থাকেন। তাই অনেক সময় এ সব বিষয়ে তাদের নজর পড়ে কম।'
মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চা-শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। চা-শ্রমিকদের পেছনে রেখে উন্নয়ন অন্তঃসারশূন্য হবে।'
Comments