১১ সপ্তাহ ধরে আটকা এনটিসির ১২ হাজার চা শ্রমিকের মজুরি

চা শ্রমিক
বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলন করছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানির শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) ঋণ জটিলতায় আটকে গেছে ১২ চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি। গেল ১১ সপ্তাহ ধরে মজুরি না পাওয়ায় চা বাগানে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। প্রায় চার সপ্তাহ ধরে শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে এসব বাগানের উৎপাদন।

গত ১৯ নভেম্বর সরেজমিনে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেতন না পাওয়ায় তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চলা দায় হয়ে পড়েছে।

বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, ঋণ জটিলতায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে সমস্যা হচ্ছে।

কোম্পানি আইন, ১৯১৩ এর অধীনে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে এনটিসি ১৯৭৮ সালে গড়ে উঠে। প্রতিষ্ঠানটিতে রাষ্ট্রের ৫১ শতাংশ শেয়ার আছে। বাকি ৪৯ শতাংশ জনগণের হাতে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটে এর শেয়ার লেনদেন হয়।

এনটিসির ১২ চা বাগানের মধ্যে সাতটি মৌলভীবাজারে, চারটি হবিগঞ্জে ও একটি সিলেটে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চা বাগান নিয়ে কাজ করা এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কৃষি ব্যাংকের কাছে এনটিসির ৩৮০ কোটি টাকা ঋণ আছে। এই বছর প্রতিষ্ঠানটি ১৫০ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেছিল। কিন্তু ব্যাংক মঞ্জুর করে ৮৬ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, 'ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা অনুসারে, নিলাম ব্রোকারদের ব্যাংকের বিক্রয় আয়ের অংশ সরাসরি মালিকদের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। মালিকরা তাদের ভাগ পান।'

সারাদেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ফাঁড়ি বাগানসহ ১৯ বাগান আছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে এনটিসির বাগান আছে ১২টি। এসব বাগানে প্রায় ১১ হাজার ২৮৬ শ্রমিক কাজ করলেও গত আড়াই মাসেরও বেশি তারা মজুরি পাচ্ছেন না। মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

শ্রমিকরা ডেইলি স্টারকে জানান, তারা ছয় সপ্তাহ বেতন ও রেশন না পেয়েও কাজ করেছিলেন। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে কর্মবিরতিতে গেছেন। গত ১১ অক্টোবর থেকে কর্মবিরতি চলছে।

পঞ্চায়েত কমিটির নেতারা ডেইলি স্টারকে জানান, শ্রমিকরা ১০ সপ্তাহ বেতন ও রেশন না পেয়ে কর্মবিরতিসহ মানববন্ধন কর্মসুচি করছেন। বেতন ও রেশন না দিলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবেন।

চা শ্রমিক ওহিলা বাউরি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টানা চার সপ্তাহ থেকে আন্দোলন করছি। বকেয়া মজুরি পরিশোধের ব্যাপারে মালিকপক্ষ স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। ব্যাংকে টাকা না থাকাসহ নানা অজুহাতে মজুরি দিচ্ছেন না মালিকরা। বাগানের ম্যানেজার বা অন্যরা ঠিকই বেতন পাচ্ছেন।'

এ ছাড়াও, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা নিলেও তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা হয়নি বলে অভিযোগ করছেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে বন্ধ এনটিসির মালিকানাধীন ১২ কারখানা। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে পাতা। এর প্রভাব পড়ছে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছয় সপ্তাহ বিনা মজুরিতে কাজ করার পরও শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে চার সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতি করছেন।'

প্রেমনগর চা বাগানের ব্যবস্থাপক হোসাইন উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষি ব্যাংকের ঋণ জটিলতায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।'

পাত্রখোলা, চাম্পা রায়, কুরমা, কুরঞ্জি, বাঘা ছড়া, মাধবপুর, পদ্মছড়া প্রেমনগর চা–বাগানসহ ১২ বাগানে প্রায় এক মাসেরও বেশি শ্রমিক আন্দোলনে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রাষ্ট্রীয় ন্যাশনাল টি কোম্পানি আরও লোকসানে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Comments

The Daily Star  | English

Lower revenue collection narrows fiscal space

Revenue collection in the first four months of the current fiscal year declined by 1 percent year-on-year

10h ago