প্রশিক্ষণ ভাতা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতপার্থক্য

জাতীয় বাজেট ২৩-২৪
ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ভাতা কাটছাঁট করায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে।

স্বাধীন সাংবিধানিক এই সংস্থাটি বলছে, তারা তাদের অবস্থান জানিয়ে সরকারকে চিঠি দেবে।

প্রশিক্ষকদের মডিউল ও ভাতার বিশদ বিবরণসহ গত জুনে সরকারের অর্থ বিভাগকে চিঠি দেয় ইসি।

সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের প্রশিক্ষণ ভাতা দেওয়ার বিধান বাতিল করার সুপারিশ করেছে অর্থ বিভাগ। একইসঙ্গে ইসি সচিবালয় সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও ইলেকটোরাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালকসহ অন্যান্যদের ভাতা কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ইসি নির্ধারিত সম্মানী ভাতার পরিমাণ বাতিল বা কমানোর অধিকার অর্থ বিভাগের নেই।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইনে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।'

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইনের ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, 'সরকার প্রতি অর্থ বৎসরে নির্বাচন কমিশনের ব্যয়ের জন্য, নির্বাচন কমিশন হইতে প্রাপ্ত প্রস্তাব বিবেচনাক্রমে, উহার অনুকূলে বাজেটে নির্দিষ্টকৃত অর্থ বরাদ্দ করিবে; এবং অনুমোদিত ও নির্ধারিত খাতে উক্ত বরাদ্দকৃত অর্থ হইতে ব্যয় করিবার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করা নির্বাচন কমিশনের জন্য আবশ্যক হইবে না।'

'ইসির পাঠানো প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করতে পারে কি না, সেটা বিবেচ্য। নির্বাচন কমিশন নিজেদের আইনগত অবস্থান তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়কে আবারও চিঠি দেবে', বলেন আহসান হাবিব।

এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব জাহাঙ্গীর আলম।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনের আগে প্রশিক্ষকদের অর্থ প্রদানে ইসির ব্যয়ের আর্থিক অসঙ্গতি ধরা পড়লে ২০২০ সালের মার্চে নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয় প্রথম বিষয়টি নিয়ে কথা তোলে।

প্রশিক্ষণ ভাতা বাবদ ইসির ৭ কোটি টাকা ব্যয় নিয়ে আপত্তি জানায় সিএজি।

ইলেকটোরাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) কর্মকর্তারা জানান, তারা সাধারণত জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচন কমিশনার ও ইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

গত অক্টোবরে ইসিকে পাঠানো অর্থ বিভাগের চিঠির একটি অনুলিপি পেয়েছে ডেইলি স্টার

সিইসি ও অন্যান্য ইসির জন্য ৯০ মিনিটের প্রশিক্ষণ সেশনের জন্য ৭ হাজার ৫০০ টাকা ভাতার প্রস্তাব করেছে ইসি। অর্থ বিভাগ এই ভাতা বাতিল করে বলেছে, দায়িত্ব পালনের জন্য তারা ইতোমধ্যে বিশেষাধিকার আইনের অধীনে কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন।

কোর্স পরিচালক ও কোর্স কো-অর্ডিনেটরের জন্য ভাতা হিসেবে যথাক্রমে ৬ হাজার ও ৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছিল ইসি। কিন্তু, অর্থ বিভাগ তা বাতিল করে দেয়।

ইটিআই কর্মকর্তারা জানান, সিইসি, ইসি ও ইসি সচিবালয়ের সচিবসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা 'বিশেষ বক্তা' হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন এবং সচিব ও ইটিআই মহাপরিচালক প্রশিক্ষণে 'কোর্স পরিচালক' হিসেবে  থাকেন।

দেড় ঘণ্টার সেশনের জন্য সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও একই পদমর্যাদার অন্যান্য কর্মকর্তাদের জন্য ৫ হাজার টাকা ভাতার প্রস্তাব করে ইসি। অর্থ বিভাগ তা কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়।

যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য ৩ হাজার টাকা ভাতার প্রস্তাব করেছে ইসি। অর্থ বিভাগ তা কমিয়ে ২ হাজার টাকা করার সুপারিশ করে।

একইসঙ্গে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ইসি প্রস্তাবিত ১ হাজার টাকা ভাতা কমিয়ে ৫০০ টাকা করার সুপারিশও করে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, 'যদি কোনো প্রশিক্ষক ১ দিনে বেশ কয়েকটি সেশনে প্রশিক্ষণ দেন, তবে তিনি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২টি সেশনের জন্য ভাতা পাবেন।'

সিএজির ২০২০ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'এমনও দেখা গেছে যে, একই ব্যক্তি একই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সেশনের জন্য ভাতা সংগ্রহ করেছেন।'

অডিট আপত্তি এখনো নিষ্পত্তি করা হয়নি বলে ইসির বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

1h ago