কোথায় যাবে ওরা

উচ্ছেদ অভিযানের কারণে বাধ্য হয়ে বাসিন্দারা চলে গেলেও পোষা বিড়াল, কুকুরগুলো এখনো ভাঙা বাড়ির আশপাশে অবস্থান করছে। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

পোষা বিড়াল ও কুকুরের জন্য ভাত-মাছ নিয়ে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী কিবরিয়া এরশাদ। মুখ দিয়ে আওয়াজ করে খেতে ডাকছেন। ২ দিন পর খাবার পেয়ে ক্ষুধার্ত প্রাণীগুলোও দৌঁড়ে আসছে। যদিও এ খাবার সবার জন্য পর্যাপ্ত নয়।

অনেক বছর ধরে প্রাণীগুলোকে যারা দেখাশোনা করে রাখতেন, তাদের বাসা ভেঙে দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এজন্য বাধ্য হয়ে বাসিন্দারা চলে গেলেও পোষা বিড়াল, কুকুরগুলো এখনো ভাঙা বাড়ির আশপাশে অবস্থান করছে।

গত বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেটে ৮টি ডি-টাইপ ভবনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। ২৮৮টি পরিবার কলোনি ত্যাগ করে চলে গেছে। এসব পরিবার ৩৫-৪০ বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছিল।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/ স্টার

আজ শুক্রবার দুপুরে কিবরিয়া এরশাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অর্ধশতাধিক পোষা বিড়াল ও কুকুর আছে কলোনিতে। এরমধ্যে বিড়ালের সংখ্যাই বেশি। গত ৩ দিন ধরে কলোনির ভবনগুলো ভাঙা শুরু হয়েছে। বাসিন্দারা চলে গেলেও পোষা প্রাণীগুলো রয়ে গেছে। অনেকে আবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ পাননি।'

তিনি বলেন, 'আমি দীর্ঘদিন ধরে কলোনিতে বসবাসকালে এসব প্রাণীদের খাবার দিতাম। আমার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল। অফিস শেষে কলোনিতে আসার পর দূর থেকে দেখেই দৌঁড়ে ছুটে আসতো। কিন্তু বাসা ভেঙে দেওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় থাকছি। এদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই। তাই অফিস ছুটির দিনে হোটেল থেকে খাবার কিনে এনেছি।'

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/ স্টার

কিবরিয়া এরশাদ আরও বলেন, 'আদর করে অলি, পলি, টলি ও টুকবোসহ আরও অনেক নাম দিয়েছিলাম বিড়ালদের। এসব নাম ধরে ডাকার সঙ্গে সঙ্গেই ওরা ভাঙাচোরার মধ্য থেকে ছুটে আসছে।'

আরেক বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, 'কলোনির অর্ধশতাধিক কুকুর ও বিড়াল ভাঙা বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও যাচ্ছে না। চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা কলোনির বাইরে রেখে আসলেও এরা ভেতরে চলে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের আদর পেয়ে আসছিল, যা ওরা ভুলতে পারছে না।'

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/ স্টার

তিনি বলেন, 'নিয়মিত ওদের খাবার দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। আবার উচ্ছেদকৃত বাসিন্দারা এখনো ভ্রাম্যমাণ অবস্থাতেই থাকছেন। তাই অনেকেই এদের আশ্রয় দিতে পারেননি।'

স্থানীয় মুজিবুর রহমান বলেন, 'এদের যারা লালনপালন করতেন, তাদের ভাঙা বাড়ির জঞ্জালের মধ্যেই অসহায়ভাবে বসে আছে প্রাণিগুলো। এরা খুবই ক্ষুধার্ত। উচ্ছেদের সময় বেশ আতংকিত হয়ে পড়েছিল। ৮ থেকে ১০ বছর ধরে একেকটি বিড়াল এখানে থাকছিল। বাসিন্দারাও অনেকে কান্নাকাটি করেছেন বাসা ত্যাগের সময়।'

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/ স্টার

উচ্ছেদের কাজ করতে আসা আওলাদ হোসেন বলেন, 'মোহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেটের আসাদ এভিনিউতে গৃহায়ন "কনকচাঁপা" ও সাতমসজিদ রোডে গৃহায়ন "দোলনচাপা" প্রকল্পের পুরাতন ৮টি ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। স্থাপনা অপসারণ করে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago