বিড়াল চিবুলে যে গাছের পতঙ্গ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

ছবি: সায়েন্স নিউজ

শিরোনাম পড়ে কিছুটা অবাক হয়েছেন, তাই না? কিসের সঙ্গে কী! বিড়াল কীভাবে গাছের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে? সুকুমার রায় রচিত হযবরলের অদ্ভুত মোটাসোটা বিড়ালটা হলেও একটা কথা ছিল। কারণ, চন্দ্রবিন্দু নামের সেই বিড়ালের আবার কিছুই অসাধ্য নেই। এত সেই বিড়াল না! এ বিড়াল নাকি আবার গাছ ও চিবিয়ে খায়, শুধু  চিবুলেই হতো, তার চাবানোর ফলে গাছের নাকি আবার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে। এমনও কি হয়?

এতদিন কেউ এসব কথা বললে, আমরা বিশ্বাস নাও করতে পারতাম, দিনে দুপুরে এই আজগুবি কথা কেই বা বিশ্বাস করবে?

এতদিন বিশ্বাস না করলেও এখন মনে হচ্ছে করাই লাগবে। স্বয়ং ক্যাটনিপ গাছের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছেন স্রেফ চিবিয়ে। তবে তার আহে আমোদের ক্যাটনিপ গাছটা নিয়ে একটু জেনে নেওয়া দরকার। ক্যাটনিপ হচ্ছে এক ধরনের আগাছা জাতীয় বুনো উদ্ভিদ। এই গাছের পাতার ঘ্রাণ নিতে বিড়ালরা অনেক পছন্দ করে বলেই এর নামই হয়ে গেছে ক্যাটনিপ। গাছটি শুধু পছন্দ করে তা ই না, অনেক সময় চিবিয়ে খায়। বিড়ালের স্বাস্থ্যের উপকারি হওয়ায় মাঝে মধ্যে হালকা গরম পানিতে সিদ্ধ করেও অনেকে বিড়ালকে খাওয়ায়। প্রিয় খাবার দেখলে আমাদের যেমন মাথা ঠিক থাকে না তেমনি ক্যাটনিপের গন্ধ পেলেও বিড়ালরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। শুধু যে উত্তেজিত হয়ে উঠে তা ই না, পাগলের মত গা ঘষতে থাকে, খেলতে শুরু করে, এমনকি মাটিতে গড়াগড়ি খেতেও দ্বিধা করে না। মাঝেমধ্যে গপাস গপাস করে কিছু পাতাও খেয়ে নেয় কিংবা অদ্ভুত আওয়াজ করে গাছপালা ছিঁড়তে থাকে। 

সাম্প্রতিকালে এক নতুন রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা গেছে এই গাছপালা চিবানোর সময় শুধু যে বিড়ালই এমন অদ্ভুত আচরণ করে তা না, অদ্ভুত আচরণ করে ক্যাটনিপ গাছও! স্বাভাবিকভাবেই বিড়ালকে উসকে দেওয়া ছাড়াও ক্যাটনিপ পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আর এই বিড়ালের চিবানোর ফলেই নাকি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ক্যাটনিপের। এ যেন রসায়নের এক উদ্ভট উভমুখী প্রতিক্রিয়া। 

১৪ জুন প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি ক্যাটনিপ গাছের অক্ষত পাতাগুলোর তুলনায় যেসব পাতা বিড়াল মোচড়ানো কিংবা চিবিনো সেগুলো থেকে আরও বেশি পরিমাণ ইরোভাইড নামের উদ্বায়ী যৌগ নির্গত হয়। যেটি পোকামাকড়ের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এই অতিরিক্ত নির্গমন একটি ক্যাটনিপ গাছকে প্রাকৃতিক 'বাগ স্প্রে' দ্বারা আবৃত করতে সাহায্য করে বলে ধরাণা করা হচ্ছে।

ছবি: সংগৃহীত

জাপানের মরিয়োকামে অবস্থিত ইয়াচ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জীববিজ্ঞানী এবং তার সহকর্মী ক্যাটনিপ (ন্যাপেটা ক্যাটারিয়া) এবং সিলভার ভাইনের (অ্যাক্টেনিভিয়া পলিগামা) রাসায়নিক বিশ্লেষণ করেছেন সেখানে দুটি গাছের ওপর বিড়ালের আনন্দদায়ক প্রভাব আছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, উভয় গাছই প্রাকৃতিকভাবে ইরিভয়েড উৎপন্ন করে যা পোকামাকড়কে পাতা খাওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করে।

তবে মজার ব্যাপার হলো যখন বিড়ালগুলো সিলভার ভাইনের সঙ্গে খেলাধুলা করে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেই ক্ষতিগ্রস্থ পাতাগুলো অক্ষত পাতার চেয়ে ১০ গুণ বেশি ইরোভয়েড নির্গত করে এবং পাশাপাশি রাসায়নিক নিঃসরণের অনুপাতও পরিবর্তন করে। 
গবেষকরা আরও দেখেছেন, মোচড়ানো ক্যাটনিপ ২০ গুণের বেশি পোকামাকড় প্রতিরোধক নির্গত করে যা প্রধানত ন্যাপ্টালেকনিক নামের এক ধরনের ইরোভয়েড। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ক্ষতিগ্রস্থ ক্যাটনিপ ও সিলভার ভাইনের সংমিশ্রণে পরীক্ষাগারে যে দ্রবণ তৈরি করা হয় তা অক্ষত পাতা থেকে তৈরি রাসায়নিক দ্রবণের চেয়ে বেশি মশা তাড়ায়। 

দলটি বিড়ালগুলোর সামনে দুটি থালা রেখেছিল। যার একটিতে অক্ষত সিলভার ভাইন এবং অন্যটিতে ক্ষতিগ্রস্ত পাতা ছিল। কোনোপ্রকার দিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই বিড়ালগুলো ক্ষতিগ্রস্থ পাতা রাখা পাত্রে খেলাধুলা করেছিল।

বিড়ালের কঠিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাওয়ালা দেহের কথা আমরা পড়েছি কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিড়ালের চিবুনো ক্যাটনিপ গাছও পরাক্রমশালী হয়ে উঠছে!
 

Comments

The Daily Star  | English

India restricts land port imports of Bangladesh’s RMG, food

India has imposed new restrictions on the imports of key goods from Bangladesh, including garments and agro-processed food, through land ports, a move expected to disrupt trade flows and add logistical hurdles for exporters..According to a notification issued today by India’s Directorate G

2h ago