ওএমএসে পণ্যের পরিমাণ কমেছে

আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রাখতে না পেরে মধ্যবিত্তরাও বাধ্য হয়ে দাঁড়ান ওএমএসের ট্রাকের পেছনে। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

খোলা বাজারে বিক্রির (ওএমএস) জন্য পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকের পেছনে অপেক্ষমাণ মানুষের সারি কেবল দীর্ঘই হচ্ছে। তবে, সরকারের এই উদ্যোগ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ কমেছে।

গত ১ জুলাই থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত বিভিন্ন কর্মসূচীর আওতায় নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ৯ লাখ ৮০ হাজার টন চাল ও আটা বিতরণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে ওএমএস, খাদ্যবান্ধব প্রকল্প (এফএফপি) ও ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ)। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত এসব সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচীর আওতায় ১২ লাখ ৮ হাজার টন খাদ্য বিতরণ করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ওএমএসের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রির পরিমাণ এর আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কমে ২ লাখ ৭১ হাজার টন হয়েছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যরা যখন বাজারের চেয়ে কম দামে চাল ও আটা কেনার জন্য ওএমএস ট্রাকের পেছনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন, ঠিক সেই সময়েই কমেছে সরকারি এই উদ্যোগ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে।

তবে বাজারে এখনো চালের দাম অনেক বেশি। অক্টোবরে আটার দামও বেড়ে নতুন রেকর্ড করেছে। আমদানি কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে আটা সরবরাহে সঙ্কট দেখা দেয়, যার ফলে দাম বাড়ছে

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় খাদ্য শস্যের বিতরণ গত ১ জুলাই থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে গত বছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কমে ২ লাখ ৫৭ হাজার টন হয়েছে।

খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন জানান, সরকার একটি ডেটাবেস তৈরির পর দেখা গেছে, ৬-৭ লাখ মানুষ অন্য কর্মসূচীতে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য পাচ্ছিলেন। তাদেরকে খাদ্যবান্ধব তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় এই কর্মসূচীতে বিতরণ কম হয়েছে।

ওএমএসের পরিমাণ কমার বিষয়ে তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে সরকারি উদ্যোগে গম আমদানি কম হওয়ায় খাদ্য অধিদপ্তর আটা বিক্রির পরিমাণ কমিয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'কারণ যাইহোক, (বিতরণের পরিমাণ) কমে যাওয়া বিস্ময়কর।'

তিনি আরও বলেন, 'উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের ন্যুনতম জীবনযাত্রার মান ধরে রাখাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে অবশ্যই খাদ্য বিতরণ বাড়ানো উচিৎ ছিল।'

তিনি জানান, সরকার ১ কোটি পরিবারের মাঝে সয়াবিন তেল, ডাল ও চিনির মতো কিছু নিত্যপণ্য বিতরণ করছে, এটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রমের আওতাধীন শস্য সরবরাহ কমানোর কোনো সুযোগ নেই।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম আরও জানান, সরকারের উচিৎ বিতরণ বাড়িয়ে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

চলতি অর্থবছরে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৩০ লাখ ৯৫ হাজার টন শস্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টন শস্য বিতরণ করেছিল।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাবুদ্দিন জানান, প্রায় সাড়ে ৪ মাস অতিবাহিত হলেও বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩২ শতাংশ পূরণ হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এর থেকে মনে হচ্ছে, সার্বিক বিতরণের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় কম হবে, যদি না বিতরণ বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়।'

কাজী শাহাবুদ্দিন জানান, আসন্ন নির্বাচনী বছরে সরকারের উচিৎ হবে নিজের স্বার্থেই বিতরণ বাড়ানো।

খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন জানান, মন্ত্রণালয় মাথাপিছু বিতরণের পরিমাণ কমানো ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে।

এ বছরের ১৬ নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টন চালসহ মোট ১৬ লাখ ১৭ হাজার টন খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Public admin reforms: Cluster system may be proposed for ministries

The Public Administration Reform Commission is likely to recommend reducing the number of ministries and divisions to 30 from 55 to improve coordination and slash the government’s operational cost.

6h ago