ওএমএসের চালে অনিয়ম করা সেই আ. লীগ নেতা পেলেন ‘সমাজসেবা’ পুরস্কার
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার বিশেষ ওএমএসের তালিকায় নিজের ও আত্মীয়-স্বজনকে ‘গরিব’ ও ‘কর্মহীন’ পরিচয় দিয়ে সরকারি চাল আত্মসাতে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহ আলম সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন।
গতকাল শনিবার জাতীয় সমাজসেবা দিবস-২০২১ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
ওএমএস ডিলার হয়ে অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ১৪ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক শাহ আলমের ডিলারশিপ বাতিল করে জেলা ওএমএস কমিটি।
করোনাকালে দিনমজুর, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, সাধারণ শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, রিকশা-ভ্যান চালক, হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের বদলে নিজের স্ত্রী, মেয়ে, তিন ভাই-বোনসহ ভাইয়ের ছেলে, দুই শ্যালক ও তাদের স্ত্রী এবং বোনের তিন দেবরসহ ১৩ জনের নাম সরকারের বিশেষ ওএমএস তালিকায় তোলার অভিযোগ আছে জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির পরিচালক পদে থাকা এই নেতার।
এ ঘটনায় গত ১৪ মে তার ডিলারশিপ বাতিল হওয়ার একমাসের মধ্যেই গত বছর ৯ জুন কাউতলি এলাকার একটি মুদি দোকান থেকে টিসিবির ৩১ বস্তা পণ্য জব্দ করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদার।
অভিযানে আটক হওয়া মুদি ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন স্বীকার করেন, তিনি এসব পণ্য টিসিবির তৎকালীন ডিলার শাহ আলমের কাছ থেকে কিনেছেন। স্থানীয় দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে এ সংক্রান্ত লিখিত জবানবন্দি আদায় করা হয় লোকমান হোসেনের কাছ থেকে। পরে তার দোকান সিলগালা করা হয়।
এদিকে, গতকাল সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সম্মাননা পাওয়ার একটি ছবি শাহ আলম তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করলে এ নিয়ে শহরজুড়ে আলোচনা শুরু হয়।
পুরস্কার নিয়ে জানতে চাইলে মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমি এই সম্মাননা পেতে সমাজসেবা কার্যালয়ে কোনো ধর্ণা দিইনি। ১৯৯৬ সাল থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন সমাজকর্মী আমি। তারাই আমাকে এই সম্মাননার জন্য বাছাই করেছে। একটা দুষ্ট চক্র রাজনৈতিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াৎ-উদ-দৌলা খান বলেন, ‘আমি তো শুধুমাত্র সম্মাননা স্মারক হস্তান্তর করেছি। জেলা সমাজসেবা বিভাগের উপপরিচালক বলতে পারবেন তাকে কোন ক্যাটাগরিতে এই সম্মাননা দেয়া হয়েছে। তবে যতদূর জানি তিনি অন্ধ কল্যাণ সমিতির সভাপতি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন বলেই তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।’
এ নিয়ে জেলা সমাজসেবা বিভাগের উপপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
Comments