ফিটনেস সনদ নেওয়া যানবাহন সংখ্যা ৭ বছরে সর্বনিম্ন

ফিটনেস সনদহীন যানবাহনের সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে । স্টার ফাইল ছবি

গত অর্থবছরে যানবাহন নিবন্ধনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও, একই সময়ে ফিটনেস সনদ নেওয়া যানবাহনের সংখ্যা ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে।

ফলে ফিটনেস সনদহীন যানবাহনের সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। বেড়ে গেছে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগ।

৫ দশমিক ৪২ লাখ নিবন্ধিত যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাবে এসব যানবাহন এই বাধ্যতামূলক সনদ নেয়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ফিটনেস সনদ নেওয়ার পরিমাণ এত কমে যাওয়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে ২টি বিষয়। এগুলো হলো- ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে অগ্রিম আয়কর অনেক বেশি বেড়ে যাওয়া এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ৩ ধরনের ব্যক্তিগত যানবাহনকে প্রতি বছরের বদলে ২ বছরে ১ বার ফিটনেস সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

নিবন্ধিত কিন্তু ফিটনেসহীন যানবাহনের মতো হাজার হাজার অনিবন্ধিত যানবাহনও ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই চলছে।

ফিটনেসহীন যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনা ও এর ফলে প্রাণহানির অন্যতম প্রধান কারণ। পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ৩ হাজার ৭৭৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৩ হাজার ১৮৬ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৫০০ জন আহত হয়েছেন। তবে অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার হিসেবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে নিবন্ধিত হয়েছে ৫২ দশমিক ৯২ লাখ যানবাহন, যার বেশিরভাগই মোটরসাইকেল। এগুলোর মধ্যে গত অর্থবছরে নিবন্ধিত হয়েছে ৫ দশমিক ২৩ লাখ যানবাহন। ২০২০-২১ অর্থবছরে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৪ দশমিক ২৪ লাখ।

মোটরসাইকেল বাদে সব যানবাহনকে ফিটনেস ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। নতুন গাড়ি, এসইউভি এবং মাইক্রোবাসগুলোর প্রথম ৫ বছর এই সনদের প্রয়োজন হয় না। এরপর প্রতি ২ বছরে একবার তাদের ফিটনেস সনদ নিতে হবে।

বিআরটিএর তথ্যানুসারে, গত অর্থবছরে মাত্র ৫ দশমিক ৬৪ লাখ যানবাহন ফিটনেস সনদ নিয়েছে, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পর থেকে সর্বনিম্ন।

অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে যখন করোনা মহামারির জন্য বিআরটিএ অফিস দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ ছিল, তখনও ফিটনেস সনদ নেওয়া যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ লাখ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ফিটনেস সনদ নেওয়ার সময় একজন গাড়ির মালিককে যে পরিমাণ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে তা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

'ফিটনেস সনদ নেওয়া যানবাহনের সংখ্যা এত কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ এটি। এত বিপুল পরিমাণ টাকা দেখে তারা সনদ নেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে', যোগ করেন তিনি।

আরেকজন বিআরটিএ কর্মকর্তা বলেন, হিউম্যান হলার এবং ট্রাকের মতো কিছু যানবাহন আছে যেগুলোর ফিটনেস সনদ থাকলেও 'ঘুষ' দিতে হয়। তাই তারা সনদ নিতে চায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, '৩ ধরনের যানবাহন – ব্যক্তিগত গাড়ি, এসইউভি ও মাইক্রোবাসকে ২০২০ সালের জানুয়ারির আগে বার্ষিক ফিটনেস সনদ নিতে হতো। এখন এগুলোকে ২ বছরে একবার সনদ নিতে হবে। তাই সনদ নেওয়া যানবাহনের সংখ্যা কমেছে।'

বিআরটিএর ডেটা অনুসারে, এই অবস্থায় ফিটনেস সনদহীন গাড়ির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ফিটনেস পরীক্ষা প্রয়োজন, এমন প্রায় ৫ দশমিক ৪২ লাখ নিবন্ধিত যানবাহন গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সনদ নবায়ন করেনি।

তবে আরেকজন বিআরটিএ কর্মকর্তার মতে, নিবন্ধিত কিন্তু ফিটনেসহীন যানবাহনের প্রকৃত সংখ্যা এত বেশি নাও হতে পারে। কারণ ৫ দশমিক ৪২ লাখ যানবাহনের মধ্যে অনেকগুলো হয়তো এখন আর রাস্তায় চলছে না।

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

39m ago