সংবাদপত্র প্রকাশনার জগত বদলে দেওয়া এক সম্পাদক
২০১৫ সালে সাংবাদিকতা পেশার উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য সদ্যপ্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খানকে 'আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা' দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।
ওই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তোয়াব খান বলেন, 'আগে কেউ ছিলেন ডান, কেউ ছিলেন বাম। এই ডান-বামকে পাশ কাটিয়ে যারা নিজেদের নির্মোহ করতে পেরেছেন তারাই সাংবাদিকতায় স্থায়ী ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।'
অনুষ্ঠানে তোয়াব খান আরও বলেছিলেন, কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে সত্যিকারের সাংবাদিক হওয়া যায় না। এ জন্য প্রশিক্ষণ ও মাঠপর্যায়ের জ্ঞানও প্রয়োজন।
এভাবে সাংবাদিকতাকে কেবল প্রাতিষ্ঠানিকতার নিগড়ে বন্দি না করে তা আরও সর্বব্যাপী করে তোলার জন্য যেসব উদ্ভাবনী সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন তোয়াব খান, তার তুলনা বিরল।
তোয়াব খান যখন বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রকাশনার জগতে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব দেন, তখনই বাংলাদেশের প্রথম ৪ রঙা সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
একইভাবে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক তোয়াব খান দেশের সংবাদপত্রে এমন কিছু চালু করেন, যা বাংলাদেশে প্রথম। একসঙ্গে ৫ শহর থেকে পত্রিকা প্রকাশ, খুব সকালে বাংলাদেশের সব জায়গায় পাঠকের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া, ছুটির দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় পত্রিকা প্রকাশ, প্রতিদিনের রিপোর্টিং মিটিং, পত্রিকার অঙ্গসজ্জার আমূল সংস্কার- এসব তার মাধ্যমেই হয়েছে।
আবার দেশ স্বাধীনের পর দৈনিক পাকিস্তান থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন।
তোয়াব খান বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রেস সচিবের দায়িত্বেও দেখা গেছে তাকে।
বাংলাদেশের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও পিআইবির মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন ১৯৫৫ সালে সাংবাদিকতায় আসা তোয়াব খান। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এই শব্দসৈনিকের লেখনী ও উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হতো 'পিন্ডির প্রলাপ'।
তোয়াব খানের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল, সাতক্ষীরায়। তার পিতার নাম আবদুল ওয়াহাব খান ও মা জোবেদা খানম।
দৈনিক সংবাদে তোয়াব খানের পেশাগত জীবন শুরু হয় গত শতকের পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে। এখানে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানের বার্তা সম্পাদক ছিলেন।
এরশাদ সরকারের পতনের পর আবার দৈনিক বাংলার সম্পাদক হন ১০ মাসের জন্য। পরে দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক পদে যোগ দেন ১৯৯৩ সালে।
গত বছর তোয়াব খান নতুন ব্যবস্থাপনায় আসা দৈনিক বাংলার সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৬ সালে একুশে পদক পান তিনি।
১৯৬২ সালে বিয়ে করেন তোয়াব খান। তার স্ত্রীর নাম হাজেরা খান। ২ কন্যার জনক তিনি। এর মধ্যে এক কন্যা এষা খান মারা গেছেন। অপর কন্যা তানিয়া খান আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে থাকেন। পেশায় শিক্ষক।
Comments