লামায় পাহাড়ে রাবার কোম্পানির আগুনে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস
বান্দরবানে লামা উপজেলায় পাহাড়ি জুমের বাগানে আগুনে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনে প্রায় একশ একর জুমের বাগানের সঙ্গে ওই এলাকায় পাখি, মৌমাছি, বিড়াল গোত্রের প্রাণী লতাবাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পুড়ে মারা গেছে। পাহাড়ি ঝিরির কাঁকড়া ও মাছ মরে পানি দূষিত হয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল জুমের বাগানে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে একটি রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জমি দখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তাদের জুমের বাগানে আগুন দিয়েছে। আগুনে জুমের ধান, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন বাগান পুড়ে গেছে। রাবার কোম্পানিটির দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
লাংকম পাড়ার স্থানীয় ইনচং ম্রো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন 'লামা রাবার কোম্পানির আগুনে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। আগুন থেকে পাহাড়ের পশু-পাখিরাও রক্ষা পায়নি। আগুনে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে।'
মনিকা তঞ্চংগ্যা নামে স্থানীয় আরেকজন বলেন, 'ঝিরির অসংখ্য মাছ এবং কাঁকড়া মারা গেছে। জলজ প্রাণী পচে পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে।'
রেংয়েন ম্রো পাড়ার কারবারির রেংয়েন ম্রো বলেন, 'আগুনে আমাদের কষ্টের জুমের বাগান পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। পাড়ার শ্মশানও আগুন থেকে রক্ষা পায়নি। আমাদেরকে উচ্ছেদের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আগুন দিয়েছে।'
'রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে ম্রোদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ' শিরোনামে গত ২৭ এপ্রিল দ্য ডেইলি স্টার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর পরই গতকাল শুক্রবার দেশের ২৮ নাগরিক এই ঘটনার নিন্দা ও জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেন।
এই ঘটনায় গত ২৮ এপ্রিল লাংকম ম্রো পাড়ার কারবারি লাংকম ম্রো লামা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসামিদের মধ্যে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপক মো. আরিফ হোসেন ও মাঝি মো. দেলোয়ারকে গতরাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আদালত আজ তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন বলে জানান লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম।
ওসি বলেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে জুমের বাগানে আগুন দেওয়ার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তবে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কর্মকর্তারা আগুন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, তারা শুধু পাহাড় পরিষ্কার করেছেন। কোম্পানিটির পরিচালক কামাল উদ্দিন গত বুধবার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কারো জুমের যায়গায় আগুন লাগাইনি। আমরা সেখানে আমাদের জায়গা পরিষ্কার করেছিলাম।'
Comments