ঘরে খাবার নেই, ১৯ দিন পর কাজে চা-শ্রমিকরা

আন্দোলন শেষে চা-বাগানে পাতা তুলতে যাচ্ছেন চা-শ্রমিকরা। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

টানা ১৯ দিন আন্দোলনের পর কাজে যোগ দিয়েছেন মৌলভীবাজারের চা-শ্রমিকরা। দীর্ঘ আন্দোলনের পর মাত্র ৫০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণায় অনেকটা বিষাদ মনে কাজে গেছেন বেশিরভাগ শ্রমিক।

আজ রোববার সকালে শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা-বাগান, ভুরভুরিয়া চা-বাগান, খাইছড়া চা-বাগান ও জেরিন চা-বাগান ঘুরে দেখা গেছে শ্রমিকরা পুরোদমে কাজ করছেন। কাঁধে ঝুলি আর মাথায় বাঁশের ছাতা নিয়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কাজে বের হন তারা। চা-বাগানের সরদারদের নেতৃত্বে শ্রমিকরা বাগানে ভাগ হয়ে পাতা তোলার কাজ শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারী শ্রমিকদের পিঠের ঝুলি ভরে উঠতে শুরু করে চা–পাতায়।

চা-শ্রমিক সুখিয়া ঘাটুয়াল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঘরে খাবার নেই। শুধু লবণ দিয়ে লাল চা খেয়ে আন্দোলন করেছি। কেউ কোনো খবর নিলো না। বেশিরভাগ রাতে মাড়ভাত খেয়েছি। রেশন পাইনি। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে আন্দোলন চলতে থাকলে মরতে হবে। অসুস্থ বাবার ওষুধ কিনতে পারিনি। উপায় না পেয়ে কাজে এসেছি।

তিনি বলেন, 'নাই মামুর চেয়ে কানা মামু ভালো। মনে করেছিলাম আমাদের মা শেখ হাসিনা কমপক্ষে ২০০ টাকা মজুরি করবেন। আজীবন নৌকায় ভোট দিলাম। অথচ ন্যূনতম দাবিটিও মানা হলো না।

সাধনা বাউরি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলে দিলেন তাই কাজে আসলাম। অথচ এই মজুরি দিয়ে কোনো কিছুই করা সম্ভব না। আসলে কেউ কথা রাখেনি। নেতারা তেল মারায় ব্যস্ত। আমাদের কথা কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না। এই আমাদের চা শ্রমিকের কপাল।

চা-শ্রমিকের সন্তান বিশ্ববিদ্যালয় চা-ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি রণজিৎ রবি দাশ বলেন, চা-শ্রমিকদের মজুরি ১২০ থেকে বেড়ে ১৭০ টাকা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী মজুরি বেড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। অথচ দ্রব্যমূল্য বিবেচনায় নিলে এর চেয়ে বড় ফাঁকি আর হয়ত নেই। এই মজুরি দিয়ে মৌলিক চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব না। এর বাইরে সুযোগ সুবিধা বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি জ্যোতির্ময় কানু বলেন, শ্রমিকের বসতভিটায় যে সবজি, ফল চাষে আয় হয় সেটা মজুরির হিসাবে ১৪ টাকা এসেছে। কিন্তু যাদের ভিটায় এসব চাষ করার সুযোগ নেই তাদের মজুরিতেও এই ১৪ টাকা কেন হিসাব করা হলো? ওভারটাইম কাজ বাবদ ধরা হলো ৬৫ টাকা। কিন্তু আপনি যেকোনো চাকরির খোঁজ নিয়ে দেখুন, কোথাও এমন ওভারটাইমের টাকা মজুরিতে হিসাব করা হয় না। এর চেয়ে বড় ভাঁড়ামি হয়তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, মালিকপক্ষের কথা শোনা যেমন প্রয়োজন, একইভাবে শ্রমিকদের কথা শোনাও জরুরি ছিল। একতরফা বৈঠক কাম্য ছিল না। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হলে শ্রমিক নেতারা মজুরির হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারতেন। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি।

আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রীর এই বিষয়ে পুনরায় বিবেচনা করা উচিত। যেন শ্রমিকদের নামের পাশের 'বঞ্চিত' শব্দটা উঠে যায়। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও একটা জাতি এমনভাবে নিষ্পেষিত, অবহেলিত হতে পারে না, হওয়া উচিত না; বিশেষ করে যে জনগোষ্ঠী দেশের অর্থনীতিতে যুগ যুগ ধরে অবদান রেখে যাচ্ছে।

চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা জানান, রোববার সিলেটের ২৩টি চা বাগানের মধ্যে ৯টি বাগান চালু থাকে। বাকিগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটি। সেসব বাগানের শ্রমিকরা সোমবার কাজে ফিরবেন। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে চা বাগানে অচলাবস্থার অবসান ঘটেছে।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, আমরা ভ্যালি কমিটি, পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব আলোচনা করেছি। সবাই কাজে যোগ দেওয়ার আশা জানিয়েছেন। তবে রোববারে বেশিরভাগ বাগানে ছুটি আছে। তবে চা কারখানা চালু হয়েছে। কিছু কিছু চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে গেছেন। আগামীকাল থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।

চা-শ্রমিকরা যে কয়েক দিন আন্দোলনে ছিলেন সেই সময়ের মজুরি ও রেশন পাবেন কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা সংসদ (বিসিএস) সিলেটের ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বলেন, এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Admin officers protest plan for more non-admin deputy secretaries

Non-admin officers announce strike tomorrow, demanding exam-based promotions

1h ago