‘দাম বাড়ে হু হু করে, আমাদের মজুরি বাড়ে না’

চা শ্রমিক
ছবি: স্টার

'জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ে, কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ে না। সারাদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সেকশনে সাপ, বিছা, পোকামাকড়ের মধ্যেও দাঁড়িয়ে কাজ করি। সপ্তাহে যে তলব (সপ্তাহের মজুরি) পাই তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন'—বলছিলেন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের চা-শ্রমিক লক্ষ্মী রবিদাস ও লক্ষ্মীমনি সিং।

জানা গেছে, নতুন করে মজুরি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সর্বোচ্চ ১২০ টাকা মজুরিতেই আটকে আছেন চা-শ্রমিকেরা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চা-শিল্পের মূল কারিগর চা-শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর চুক্তি হওয়ার কথা প্রতি ২ বছর পর পর। বর্তমানে মজুরি চুক্তির মেয়াদ ১৯ মাস পার হওয়ার পথে।'

'২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আগের চুক্তির মেয়াদ পার হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর শ্রীমঙ্গলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। এতে চা শ্রমিকদের মজুরি ১০২ টাকা থেকে ১২০ টাকায় উন্নীত করা হয়।'

'ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর। এরপর মজুরি বাড়ানোর নতুন চুক্তি আর হয়নি,' যোগ করেন তিনি।

করোনা মহামারির ঝুঁকি নিয়ে জীবন ও জীবিকার তাগিদে আগের মজুরিতেও শ্রমিকরা নিয়মিত কাজ করেছেন। এতো অল্প মজুরিতে নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে আর পাল্লা দিয়ে উঠতে পারছেন না তারা।

শমশেরনগর কানিহাটি চা-বাগানের শ্রমিক আলোমনি মৃধা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামরা চা-শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরি পাইয়া কীভাবে সংসার চালাবো? বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম বাড়ছে তাতে এই টাকা দিয়া সংসার চলি না। এক একটা ঘরে বাচ্চা-কাচ্ছা লইয়া ৫-৭ জন থাকি। তারার খরচ কেমনে চলবি?'

চা-শ্রমিক মিনা রায়ের বক্তব্যও একই।

চা শ্রমিক
ছবি: স্টার

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৮ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ মজুরি ১০২ টাকা থেকে ১২০ টাকা করা হয়। স্মারক অনুযায়ী চা-শ্রমিকদের মজুরি এ-ক্লাস বাগানে ১২০ টাকা, বি-ক্লাস বাগানে ১১৮ টাকা ও সি-ক্লাস বাগানে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

চা-শ্রমিক নেতা সিতারাম বীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনাকালে ঝুঁকি নিয়েও আমরা সারাক্ষণ কাজ করেছি। প্রতিটি বাগানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই দলবদ্ধভাবে কাজ করেছি। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও মজুরি বাড়ানোর চুক্তির মেয়াদ ১৯ মাস হলো পার হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'চা-বাগানে এই মজুরি পাওয়ার পর সপ্তাহের বিদ্যুৎ বিল, অনুষ্ঠান চাঁদা, ইউনিয়ন চাঁদা—এসব কাটার পর সাড়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা থাকে। এই টাকায় দিনে একবেলা খেয়েও মাস কাটানো দায়।'

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলছে। দেশের ১৬৬ চা-বাগানে এ ধর্মঘট হচ্ছে। ৩০০ টাকা মজুরি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতার হবে। দেশের বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকেরা একত্রিত হয়েছেন।'

এ বিষয়ে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনা চলাকালে এভাবে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করা বেআইনি। এখন চা-বাগানে ভরা মৌসুম। কাজ বন্ধ রাখলে সবার ক্ষতি। তারাও এই মৌসুমে কাজ করে বাড়তি টাকা পায়।'

শ্রমিকদের নতুন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, জানতে চাইলে গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, 'আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি যাতে তাদের কাজে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।'

১৯ মাস দেরির বিষয়ে শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একমাস পরে দেরি মনে করলে শ্রমিক পক্ষ আলোচনা থেকে বের হয়ে সংগ্রাম-আন্দোলন করতে পারে, আমাদের জানাতে পারে। চা-শ্রমিক নেতারা তা করেনি। আলোচনায় থাকা অবস্থায় তারা আন্দোলনে গেছেন।'

'মালিক ও শ্রমিকপক্ষ আলোচনায় আছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'অফিসিয়ালি আলোচনা থেকে কেউ বেরিয়ে যায়নি। আলোচনায় থাকা অবস্থায় ধর্মঘট শ্রম আইনের পরিপন্থী। চা-শ্রমিক ইউনিয়ন দাবিনামা উত্থাপন করেছে। সমঝোতা না হলে সালিশকারক ডিজির কাছে যাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'চা পাতার ভরা মৌসুম। কাঁচা পাতা নষ্ট হলে আমি মনে করি শ্রমিকদেরই বেশি ক্ষতি। চিঠি পাওয়ার পর ২ পক্ষের সঙ্গেই কথা বলার চেষ্টা করছি। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, তারা কর্মসূচি দিয়ে ফেলেছেন। সবার সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।'

Comments

The Daily Star  | English
government bank borrowing target

Govt to give special benefits to employees, pensioners from July 1

For self-governing and state-owned institutions, the benefit must be funded from their budgets

1h ago