৫০ টাকা মজুরি বৃদ্ধিতে চা-শ্রমিকরা হতাশ, নেতারা বলছেন কাজে যাবেন

দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা-শ্রমিকদের আন্দোলন। স্টার ফাইল ছবি

চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার গণভবনে চা-বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মজুরি নির্ধারণ করে দেন। ৫০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণায় বেশিরভাগ চা-শ্রমিক হতাশ হলেও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত মেনে তারা রোববার থেকে কাজে যোগ দেবেন।

মজুরি নির্ধারণের ঘোষণা আসার পর বিভিন্ন বাগানের অন্তত ২০ জন চা-শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার। তাদের প্রায় সবাই মজুরি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, গত ১৮ দিন ধরে আন্দোলন করে তাদের ঘরে খাবার ফুরিয়ে গেছে। এখন আন্দোলন থেকে সরে আসা ছাড়া অনেকেরই কোনো উপায় নেই।

চা শ্রমিক দয়াল অলমিক ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী চা-বাগানের মালিকদের সঙ্গে কথা বললেন। কিন্তু তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা না বলেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমি এই মজুরি মানি না। আমাদের নেতারাও কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারছেন না।

চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজারের আহ্বায়ক রাজদেও কৈরী ডেইলি স্টারকে বললেন, 'চা-শিল্পের ১৬৮ বছরের ইতিহাসে আজ মজুরি দাঁড়াল মাত্র ১৭০ টাকা। যা ১ লিটার তেলের দামও না। বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে ৬-৭ জনের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য দৈনিক ৬৭০ টাকা মজুরি, বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, অর্জিত ছুটি, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক ও ৯০ দিন কাজ করলেই একজনকে শ্রমিককে স্থায়ী করার বিষয়টি বাস্তবায়ন প্রয়োজন।'

চা-বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী দেশের ১৬৭ টি বাগানে চা-জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখের বেশি। এর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক প্রায় ১ লাখ। একজন শ্রমিকের মজুরিতে প্রায় ৫ জনের ভরণপোষণ চালাতে হয়।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বিপ্লব পাশি মান্দ্রাজি ডেইলি স্টারকে বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যে ৩০০ টাকা মজুরি দিয়েও সংসার চালানো সম্ভব না। সংসদেও ৫০০ টাকা মজুরির পক্ষে দাবি উঠেছে। অথচ আমাদের মজুরি বলা হলো ১৭০ টাকা। এটা আসলেই খুব কম।

চা বাগান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্বে চা-উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। ২০২১ সালে মহামারির মধ্যেও দেশে ৯৬ দশমিক ৫০৬ মিলিয়ন কেজি চা-উৎপাদনে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়। প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৩২ রুপি (২৭৭ টাকা)। তারা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন।

সরকারি তথ্য মতে, দেশে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার অর্থাৎ ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৮০ টাকা; সেখানে নতুন মজুরিতে চা-শ্রমিকদের সর্বোচ্চ বার্ষিক আয় হবে ৬১ হাজার ২০০ টাকা।

শমশেরগর চা বাগানের নারী শ্রমিক মনি গোয়ালা ও দেওছড়া চা বাগানের মায়া রবিদাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বামী, সন্তান, শ্বশুর, ননদসহ ৮ জনের সংসার আমার। মাসে প্রায় ৬৫ থেকে ৭৫ কেজি চাল লাগে, ডাল ৩ কেজি, আড়াই লিটার সয়াবিন তেল, আলু, শাসকসবজি, পেঁয়াজ-রসুন-মশলা-লবণ-চিনি, বিদ্যুৎ বিল, সাবান, পূজা, উৎসব, শ্রাদ্ধ ও ইউনিয়ন চাঁদা, ফান্ড, মাছ-মাংস-ডিম, সন্তানদের পড়ালেখা, ও অন্যান্য খরচ আছে। নতুন কাপড় নাহয় না-ই কিনলাম। তবু মাসে সর্বনিম্ন খরচ ১০ হাজার টাকা। এই হিসাবেই ন্যূনতম মজুরি ৩০০ টাকা আসে।'

লুহাউনি চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অজিত কৈরি বলেন, সবাই কাজে গেলে আমরাও যাব। বিভিন্ন পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতিকে ফোন দিয়েছি। সবাই বলে কাজে যাবে।

চা-শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে আজ সিলেটে 'তৃতীয় পক্ষ' নামের নাগরিক সংগঠনের আয়োজন করা নাগরিক সংহতি সমাবেশের অন্যতম সংগঠক আব্দুল করিম কিম ৫০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ১৮ দিনের আন্দোলনে চা-শ্রমিক পরিবারগুলো এখন কপর্দকহীন। অনেকের ধারণা ছিল সাহেবদের কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত জানাবেন। কিন্তু মাত্র ৫০ টাকা মজুরি বাড়ানোয় বাগানে বাগানে হতাশা নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, নিরুপায় হয়ে শ্রমিকেরা হয়তো কাজে ফিরে যাবে কিন্তু দীর্ঘ আন্দোলনের পর মাত্র ৫০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি হতাশাজনক।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। তিনি যত বাড়াবেন তততেই রাজি আছি। আমরা তো কম আশা করেছিলাম। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানাই। চা-শ্রমিকেরা আগামীকাল থেকে কাজে যোগ দেবেন।'

 

Comments

The Daily Star  | English

US states worried about election unrest take security precautions

Many of the most visible moves can be seen in the battleground states that will decide the presidential election, states like Nevada where protests by Trump supporters broke out after the 2020 election.

2h ago