‘৩০০ টাকা মজুরি দে, নইলে বুকে গুলি দে’

মৌলভীবাজার জেলার আলীনগর চা বাগানের নারী চা শ্রমিক দুলন বাউরি। ৫ কিলোমিটার হেটে কমলগঞ্জ উপজেলার দোয়েল চত্বরে মিছিলে এসে বসেছিলেন ৩ ঘণ্টা। তার হাতে ‘৩০০ টাকা মজুরি দে নইলে বুকে গুলি দে’ লেখা প্ল্যাকার্ড।
৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে রোববার দুপুরে সিলেট এয়ারপোর্ট-ভোলাগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চা-শ্রমিকরা। ছবিটি লাক্কাতুরা এলাকা থেকে তোলা হয়েছে। ছবি: শেখ নাসির/ স্টার

মৌলভীবাজার জেলার আলীনগর চা বাগানের নারী চা শ্রমিক দুলন বাউরি। ৫ কিলোমিটার হেটে কমলগঞ্জ উপজেলার দোয়েল চত্বরে মিছিলে এসে বসেছিলেন ৩ ঘণ্টা। তার হাতে '৩০০ টাকা মজুরি দে নইলে বুকে গুলি দে' লেখা প্ল্যাকার্ড।

গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, 'আমরা ১২০ টাকা মজুরি মানি না। আমাদের মাঠে নামিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা উধাও। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই। ১২০ টাকা মজুরিতেই যদি আমাদের থাকতে হয় তাহলে এতো আন্দোলন কেন? আমরা মাছ-মাংস না, শুধু চাল-ডাল ও মোটা চালের ভাত খেয়ে বাঁচার ন্যূনতম গ্যারান্টি চাই। বাঁচতে চাই।'

ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/ স্টার

চা-শ্রমিক ফুলমতি ঘাটুয়াল বলেন, 'আমরা আমাদের অধিকার চাই। এই মজুরি দিয়ে চলতে পারি না। আমরা আন্দোলন করছি বাঁচার জন্য না। আমরা আন্দোলন করছি যেন না খেয়ে না মারা যাই।

সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানের চা শ্রমিকের সন্তান দেবাশীষ গোয়ালা বলেন, 'টাকা বাড়াতে গেলে মালিক পক্ষ কেবল লোকসানের কথা বলেন। গত ১৬ থেকে ২২ তারিখে চা বোর্ডের পেইজে ডুকে দেখলাম প্রায় ৮২ শতাংশ রপ্তানি (সেইল) হয়েছে। তারপরও তারা লোকসানের টালবাহানা করে মজুরি বাড়াতে চান না। ১৯ মাস আলোচনায় ১২০ টাকা থেকে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। ঢাকায় মিটিংয়ের পর আরও ৬ টাকা বাড়ানো হয়। কিন্তু আমাদের দাবি ৩০০ টাকা করতে হবে।' 

ছবি: শেখ নাসির/ স্টার

তিনি বলেন, '২০২০ সালে করোনাকালে মানুষ যখন হোম কোয়ারেন্টিনে তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গিয়ে চা শ্রমিকরা কাজ করে গেছে। করোনাকালে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু করোনার ক্ষতিপূরণ হিসেবে মালিকদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোটি কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়। শ্রমিকরা করোনার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও তাদের প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। এখন ৩০০ টাকা মজুরি আমাদের যৌক্তিক দাবিটাও তারা মেনে নিচ্ছে না।'

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (আইপিডি)

দেশের চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণসহ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে 'চা শ্রমিক উন্নয়ন কমিশন' গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করছে পরিকল্পনাবিদদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (আইপিডি)।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে রোববার বলা হয়, বিগত দশকগুলোতে চা শিল্পের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও বিকাশ পরিলক্ষিত হলেও চা শ্রমিকদের ভাগ্যের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি, যা অত্যন্ত বিস্ময়কর ও হতাশাজনক। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্য-বঞ্চনা-শোষণের দুষ্টচক্রে আবর্তিত হতে হচ্ছে। বিপরীতে চা শিল্প মালিকদের বিত্ত-বৈভব বাড়ছে ক্রমাগত।'

আইনি নোটিশ

চা বাগানের শ্রমিকদের দৈনিক হাজিরা ৫০০ টাকা করার দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আনিসুর রহমানের পক্ষে অ্যাডভোকেট চঞ্চল কুমার বিশ্বাস সোমবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠান।

৭ দিনের সময় দিয়ে শ্রম সচিব, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সচিব বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশে চা শ্রমিকদের দৈনিক হাজিরা ৫০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে জানিয়েছে নোটিশপ্রেরণকারী আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস।

তিনি বলেন, 'চা শ্রমিকদের বাংলাদেশে নিজস্ব কোনো ভূমি নেই। এটা হতে পারে না। এ কারণে নোটিশে দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকার পাশাপাশি চা শ্রমিকদের নিজস্ব আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছি।'

নোটিশকারী এ আইনজীবী বলেন, 'বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে চা শ্রমিকদের বাসস্থান সাংবিধানিক অধিকার। তাদের অবশ্যই ভূমি থাকবে। এছাড়া বর্তমান বাজার মূল্যে চা শ্রমিকদের যে মজুরি দেওয়া হয় তা অমানবিক। এ সব বিবেচনায় আদালতে নোটিশ পাঠিয়েছি। নোটিশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে উচ্চ আদালতে রিট করব।'

Comments

The Daily Star  | English

An economic corridor that quietly fuels growth

At the turn of the millennium, travelling by road between Sylhet and Dhaka felt akin to a trek across rugged terrain. One would have to awkwardly traverse bumps along narrow and winding paths for upwards of 10 hours to make the trip either way.

12h ago