‘ধার-বাকি করে আর কতদিন চলতে পারব জানি না’

মালতি
মালতি গঞ্জু। ছবি: স্টার

চা-শ্রমিক মালতি গঞ্জু। মৌলভীবাজার জেলার একটি চা-বাগানে কাজ করেন এবং সেখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ৪৫ বছর বয়সী মালতির বাবা-মা চা-শ্রমিক ছিলেন, এখন তিনি।

মালতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বংশ পরম্পরায় চা পাতা তুলতে শিখেছি।'

তিনি জানান, যখন মৌসুম থাকে না তখন কম পাতা তুললেও মৌসুমে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ কেজি কাঁচা চা পাতা তুলতে পারতেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো বেশি চা পাতা তুলতে পারেন না।

মালতি বলেন, 'বেশি চা পাতা তোলা ছাড়া উপায় নেই। আমার দৈনিক নগদ মজুরি ১২০ টাকায় আমাদের ৬ জনের পরিবার চলে।'

মালতি
ছবি: স্টার

মূলত মালতির এই আয় দিয়েই চলে এই পরিবারটি। তার দিনমজুর স্বামী মতিলাল কোথায়ও কাজ পেলে করেন, নয়তো বেকার থাকেন।

তিনি আরও বলেন, 'বড় ছেলের বউ সন্তানসম্ভবা। কত কিছু খেতে চায়। আমাকে বলে, কিন্তু কিছুই দিতে পারি না। আমার বড় মেয়েও বাড়িতেই থাকে। ছোট ছেলেটাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর পর টাকার অভাবে আর পড়াতে পারিনি।'

একটি গরু আছে মালতিদের, আর একটি ঘর। একই ঘরে পরিবারের ৬ সদস্যের সঙ্গেই থাকে গরুটিও। সেই ঘরের টিনও ছিদ্র হয়ে গেছে।

মালতি বলেন, 'কতবার পঞ্চায়েতকে জানিয়েছি ঘরটি মেরামতের জন্য। বলতে বলতে বর্ষাও শেষ হয়ে গেল। আজ পর্যন্ত মেরামত হলো না। বৃষ্টি এলেই ভিজতে হয়। কাজে থাকলে সারাদিন চা পাতা তোলার সময় ভিজি, আবার রাতে বৃষ্টি হলে ঘরে গিয়েও ভিজি।'

রাতে বৃষ্টি এলে নির্ঘুম বসে থাকতে হয় তাদের। তারপর সেই ঘুমঘুম চোখ নিয়েই পরদিন কাজে যেতে হয় মালতিকে।

দৈনিক অন্তত ২০ কেজি চা পাতা তুললে তবেই ১২০ টাকা মজুরি পান চা-শ্রমিকরা। সপ্তাহ শেষে এই হারে পারিশ্রমিকের সঙ্গে ৬ দিন কাজ করলে রেশন হিসেবে পান সাড়ে ৩ কেজি চাল কিংবা আটা। দৈনিক হাজিরার হিসাব হওয়ায় অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে কাজে না গেলে সেই দিনের পারিশ্রমিক আর তারা পান না।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা তুলে ধরে মালতি বলেন, 'আমি চা-বাগানে, আর আমার স্বামী চা-বাগানের বাইরে কাজ করে। যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সবার খাবারটাও ঠিক মতো হয় না। চাল, ডাল, তেল, লবণের যে দাম, এই সামান্য টাকায় কীভাবে চলবে? যা আয় করি তার চেয়ে খরচ অনেক বেশি।'

মালতি
ছবি: স্টার

'দোকানে অনেক টাকা বাকি হয়ে গেছে। আর বাকিও দিতে চায় না। আজ সকালে (সোমবার) তেল ও লবণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পাশের বাড়ি থেকে একটু তেল আর লবণ ধার করে এনে রান্না করেছি। ধার-বাকি করে আর কতদিন এভাবে চলতে পারব জানি না,' যোগ করেন মালতি।

কথাগুলো বলতে বলতে গলা ধরে আসে মালতির। আর কিছুই বলতে পারছিলেন না।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন চা-শ্রমিকরা। অর্থাভাবে সন্তানদের উচ্চশিক্ষাও দিতে পারেন না তারা। ফলে তাদের সন্তানদেরও একইভাবে বাবা-ময়ের মতোই জীবন কাটাতে হয়।

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে দেশের ১৬৬ চা-বাগানে গত শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।

আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন মালতিও। তার ভাষ্য, 'সংগ্রাম করতে চাই বলে আন্দোলনে যাইনি। আন্দোলন করছি দুবেলা খেয়ে বাঁচার জন্য। এখন যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে নূন্যতম যেটুকু দরকার অন্তত সেটুকু তো দেবে আমাদের। সারাদিন না খেয়ে আন্দোলন করেছি। ঘরে ফিরে ঘুমিয়েছিলাম ভাতের মাড় খেয়ে।'

Comments

The Daily Star  | English

Pope Francis dies at 88

His death came just a day after he delighted the crowds of worshippers at the Vatican on Easter Sunday with an appearance on the balcony at Saint Peter's Basilica.

41m ago