৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা-শ্রমিকদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে চা-শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: স্টার

চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।

সারা দেশে ১৬৭টি চা-বাগানে শ্রমিকদের আন্দোলনের অষ্টম দিনে শনিবার বিকেলে দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পরই নিপেন পাল আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু মজুরি বৃদ্ধিকে অপর্যাপ্ত দাবি করে রাতেই হাজারো চা-শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।

নিপেন পাল বলেন, শ্রীমঙ্গলে শ্রম দপ্তরে চা-শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার পক্ষের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারিত হয়। এরপর ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা আমিই দেই। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যেই আমিই আবার সেই ঘোষণা তুলে নেই।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর বিভিন্ন চা-বাগান থেকে পঞ্চায়েত কমিটি ও ভ্যালি কমিটির নেতারা আমাদের ফোন দিয়ে জানান, ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নেবেন না জানিয়ে শ্রমিকরা বাগানে বাগানে আন্দোলন শুরু করেছেন। শ্রমিকরা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। তাই আমরা শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।

তেলিয়াপাড়া চা বাগানের নারী শ্রমিক স্বপ্না বাউরি ডেইলি স্টারকে বলেন, আমরা দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছি। ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে আমাদের পোষায় না। আমরা সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করে ৬-৭শ টাকা পাই। এ দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। এক কেজি চালের দাম ৬০ টাকা, এক কেজি আলু ৪০ টাকা। ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে আমাদের হয় না। তাই ৩০০ টাকা মজুরি না হলে আমরা ধর্মঘট চালিয়ে যাব। না খেয়ে মরার চেয়ে আন্দোলন করে মরা ভালো।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালীর সভাপতি বিজয় হাজরা ডেইলি স্টারকে বলেন, চা শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে আমরা আন্দোলন আছি ও থাকব। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

লস্করপুর ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ বাড়াইক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি চা-বাগানের বাগান পঞ্চায়েত নিয়ে আমরা বসেছিলাম। তারা সবাই ১৪৫ টাকা মজুরিতে ধর্মঘট প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির লোকজন আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে ১৪৫ টাকায় কীভাবে রাজি হলেন বুঝলাম না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট ছাড়ছি না।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক শামসুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, চায়ের ভরা মৌসুমে শ্রমিকদের আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আমার বাগানের সেকশনে যেসব পাতা বড় হয়েছে সেগুলোর কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সেগুলো কেটে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাছাড়া দৈনিক মজুরির সঙ্গে চা শ্রমিকরা রেশন, চিকিৎসা, গৃহ সুবিধাসহ আরও নানা ধরনের সুবিধা ভোগ করছেন। এসব বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসা উচিত বলে তিনি দাবি করেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
Government notification banning Awami League

Govt bans activities of AL until ICT trial completion

A gazette notification was issued in this regard by Public Security Division of the home ministry

2h ago