ওয়াসা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে: মিজানুর রহমান
রাজধানীর জুরাইন এলাকার একজন অধিবাসী মিজানুর রহমান। তার এলাকা থেকে কাঁচের জগে ওয়াসার পানি নিয়ে তিনি গতকাল কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনে এসেছিলেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে লেবুর শরবত খাওয়াতে। কিন্তু, এমডির দেখা মেলেনি। ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকেও বারবার চেষ্টা করেও ওয়াসার এমডির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
মিজানুর রহমানের অভিনব-বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবাদ গতকাল ‘নগরীর সবচেয়ে আলোচিত ঘটনায়’ পরিণত হয়। আজ (২৪ এপ্রিল) মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, “ওয়াসা আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেনি।” বলেন, “ যে পানি নিয়ে গিয়েছিলাম তারা বলেছে যে তা ওয়াসার পানি নয়। আমাদেরকে মিথ্যাবাদী হিসেবে দেখেছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে চ্যালেঞ্জ দিয়ে তাদেরকে বলেছিলাম যে- “চলুন এক্ষুণি যাই। সঙ্গে মিডিয়ার গাড়ি আছে।” তারা সেই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেনি।”
তিনি ওয়াসার ময়লা পানির ভুক্তভোগীদের সম্মিলিতভাবে অভিযোগ জানানোর ও প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “গতকালকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পানির সমস্যা অনেকেই আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাদেরকে বলেছি- চলেন সবাই সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করি। সবাই মিলে একটা আওয়াজ তুলি।”
ওয়াসার এমডির ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি “শতভাগ সুপেয়”- এমন দাবি করার পর জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ফেসবুকে আমি ওয়াসার এমডির কথাটিই তুলে ধরে স্ট্যাটাস দিলাম, “ওয়াসার পানি শতভাগ বিশুদ্ধ”। তখন লোকজন নানান মন্তব্য করলেন। আমি ভাবলাম- এই পানি ওয়াসার কাছে নিয়ে যাবো দেখি তারা কী বলে। এর মধ্যে মহল্লার এক ছোট বোন বললো- ওনাদের জন্যে লেবুর শরবত বানিয়ে নিয়ে গেলে ভালো হয়। তখন আমি ভাবলাম- হ্যাঁ, এটাই ভালো হয়। শুধু পানি না নিয়ে শরবত নিয়ে যাই।”
একই সঙ্গে তিনি তিন দাবিও তুলে ধরে বলেন, “কালকে ওয়াসা ভবনে গিয়ে আমার তাৎক্ষণিকভাবে তিনটি দাবির কথা মনে হয়েছে। প্রথম দাবি- অসত্য কথা বলার জন্যে ওয়াসার এমডিকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে যা খুশি তা বলতে পারেন না। দ্বিতীয়ত হচ্ছে- আমাদের অঞ্চলে ওয়াসার পানি খেয়ে এ পর্যন্ত কতো মানুষ অসুস্থ হয়েছেন তার একটি সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তৃতীয়ত: যতোদিন থেকে ময়লা পানি পাচ্ছি এর সুষ্ঠু তদন্ত করে সেই ময়লা পানির বিল ফেরত দিতে হবে এবং যতোদিন পর্যন্ত সুপেয় পানি দিতে না পারবে ততোদিন পর্যন্ত আমরা পানির বিল দিবো না।”
ওয়াসার কাছে আগে কোনো অভিযোগ করেছিলেন কী না- এমন প্রশ্নে জবাবে মিজানুরের মন্তব্য, “আমরা দীর্ঘদিন থেকে এ অবস্থায় আছি। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে এ এলাকার মানুষ নানাভাবে- মৌখিক, ব্যক্তিগত ও সম্মিলিতভাবে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফলাফল যখন পাওয়া যাচ্ছে না তখন ২০১২ সালে বড় পরিসরে আমরা প্রতিবাদ জানাই। এলাকায় সপ্তাহখানেক ঘুরে আমরা সাড়ে ৩ হাজার স্বাক্ষর গ্রহণ করি। সেই স্বাক্ষরের সঙ্গে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুস্বাক্ষর নিয়ে আমরা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান কাছে দরখাস্ত দেই। তার সঙ্গে আমাদের সরাসরি কথাও হয়। আমরা তাকে যতোই বোঝাতে চাইলাম তিনি এক কথাই বললেন, ‘আমাদের কোনো টাকা নাই’। তারপর আমরা চলে আসি।”
তার মতে, “আজকে প্রায় আট বছর হয়ে গেলো। আমাদের এখানে লাখ লাখ মানুষ ভুক্তভোগী। এমন অবস্থায় দায়িত্ববান কেউ যদি বলেন, “ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়” তাহলে তা খুবই দুঃখজনক। দায়িত্ববান মানুষদের লাগামছাড়া কথা সহ্য করতে করতে আমরা এমন একটি পর্যায়ে চলে এসেছি যে এখন আর সহ্য করা যায় না।”
ওয়াসা প্রতারণা করছে বলেও মন্তব্য করেন মিজানুর। বলেন, “গতকাল বিকালে ওয়াসা কৌশল করে আমার বাসায় এসেছিলো। তাদের একজন প্রকৌশলী নাকি পানি দিয়ে কুলি করেছে। একজন নাকি সেই পানি খেয়েছেনও। এখন তারা বলতে চাচ্ছে যে- আমার অভিযোগ সঠিক নয়। তারা আমার বাসায় গিয়ে পানি খেয়ে আসছে। আমার সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। আমার কথা হচ্ছে- পানি খেলেইতো সঙ্গে সঙ্গে মারা যাবে না। দীর্ঘসময় পর এর প্রতিক্রিয়া হবে। আসলে তারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।”
Comments