টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী নৌযানের জন্য প্রশাসনের ১২ শর্ত

টাঙ্গুয়ার
ছবি: টাঙ্গুয়ার হাওরের হিজলবাগান ও নোঙর করা পর্যটকবাহী নৌকা। ছবি: দ্বোহা চৌধুরী/স্টার

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জে মেঘালয় পাদদেশে অবস্থিত দেশের অন্যতম জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ টাঙ্গুয়ার হাওরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নৌ-পর্যটন।

এবার রামসার কনভেনশনের আওতায় সংরক্ষিত এ হাওরে পর্যটক প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে ১২টি শর্ত দিয়েছে প্রশাসন। এখন থেকে বাধ্যতামূলক নিবন্ধনসহ ১২টি শর্ত না মানলে কোন নৌযান পর্যটক নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করতে পারবে না।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার স্থানীয় প্রশাসনের সম্প্রতি জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা ১২টি শর্তের মধ্যে দুটি নৌযানের নিবন্ধন সংক্রান্ত এবং বাকি ১০টি পর্যটন পরিবহন ও পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত।

এসব শর্ত লঙ্ঘন করলে নৌযানের নিবন্ধন বাতিল করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত টাঙ্গুয়ার হাওর। এ হাওরের পাশে জাদুকাটা নদী, বারেকের টিলা, শিমুল বাগান, শহীদ সিরাজ লেকসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকা থাকায় প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়।

সম্প্রতি অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের চাপে টাঙ্গুয়ার হাওরে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মধ্যে পড়ে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পর্যটকবাহী নৌযানের নিবন্ধনের সিদ্ধান্তসহ পর্যটক বহনের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

পর্যটন পরিবহনকারী নৌযানের নিবন্ধন সংক্রান্ত শর্ত দুটি হলো—নিবন্ধন হস্তান্তরযোগ্য নয় ও তা সার্বক্ষণিক নৌযানে প্রদর্শনের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে এবং নিবন্ধনপত্র তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত সময় অনুযায়ী নবায়ন করতে হবে।

নিবন্ধিত নৌযানকে পর্যটন পরিবহনে যে ১০ শর্ত মানতে হবে তা হলো-

১. নদী, হাওর, বিল, পুকুরের পানি ও উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের ময়লা, আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলা যাবে না।

২. নৌযানে অবস্থানকালে প্রতিটি নৌযানে সংরক্ষিত ঢাকনাযুক্ত বড় ডাস্টবিনে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হবে এবং নিজ দায়িত্বে ময়লা-আবর্জনা নির্ধারিত স্থানে স্থানান্তর করতে হবে।

৩. নৌযানে লাউডস্পিকার, মাইক প্রভৃতিসহ উচ্চ শব্দ উৎপাদনকারী কোনো ধরনের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

৪. লাইফ জ্যাকেটসহ যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া নৌযানে ভ্রমণ করা যাবে না। বিরূপ আবহাওয়ায় নৌযানে ভ্রমণ করা যাবে না।

৫. নৌযানে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।

৬. নৌযানে পর্যটকদের জন্য মানসম্মত পরিবেশ তথা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. নৌযানে ভ্রমণের সময় কোনো ধরণের অসামাজিক কাজ কিংবা অনৈতিক কাজ কিংবা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায় এমন কাজ করা যাবে না।

৮. স্থানীয় এলাকাবাসীর ভাবাবেগ ও সামাজিক রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।

৯. অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না।

১০. নৌযানে চলাচলের সময় পর্যটকদের মালামাল রক্ষার বিষয়ে ও দুষ্কৃতকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত ৬টি নৌযান নিবন্ধন পেয়েছে এবং আরও ২৫টি নৌযান শিগগির নিবন্ধন পাবে। পর্যটক পরিবহনে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার পর মোট ১০৭টি নৌযান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। সব নৌযানের সার্বিক সুযোগ সুবিধা ও শর্ত পালনের সক্ষমতা নিশ্চিতের পর পর্যায়ক্রমে নিবন্ধন দেওয়া হবে।'

তিনি বলেন, 'টাঙ্গুয়ার হাওর বিস্তৃত এলাকা এবং তাহিরপুর ছাড়াও মধ্যনগর হয়েও অনেক নৌযান হাওরে আসে। আমরা মধ্যনগর উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিবন্ধনবিহীন পর্যটকবাহী নৌযান পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করব।'

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago