বান্দরবানের পর্যটনে নিষেধাজ্ঞার অভিঘাত

ছবি: মংসিং হাই মারমা/স্টার

নিরাপত্তাজনিত কারণে ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ আছে। এর ভেতর দুর্গম পাহাড়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) হামলা ও বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৫ সেনাসদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এ অবস্থায় জেলা শহরের মেঘলা, নীলাচল ও আলীকদমের পর্যটন স্পটগুলো খোলা থাকলেও তা আশানুরূপ পর্যটক টানতে পারছে না। ফলে গত ঈদের মতো এবারের ঈদের ৫ দিনের টানা ছুটিতেও বান্দবানের হোটেল-মোটেলগুলো কার‌্যত পর্যটকশূন্য।

বান্দরবানের দূর্গম এলাকাগুলোতে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ১৭ অক্টোবর রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞা কয়েক দফা বাড়িয়ে আলীকদম ও থানচিতেও আরোপ করা হয় একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা। পরে আলীকদম উপজেলা থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও রুমা-রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় এখনো এই নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে।

ছবি: মংসিং হাই মারমা/স্টার

পর্যটন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, টানা নিষেধাজ্ঞার কারণে ভ্রমণপিপাসুরা বান্দরবান ভ্রমণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা ছাড় দিয়েও নিষেধাজ্ঞা নেই এমন স্পটগুলোর হোটেল-মোটেলগুলোতে কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক পাওয়া যাচ্ছে না।

বান্দরবান শহরের হোটেল হিল্টনের ব্যবস্থাপক আক্কাস উদ্দিন জানান, স্বাভাবিক সময়ে সাধারণ ছুটির দিনেও তাদের হোটেলের বেশিরভাগ কক্ষ অনেক আগেই বুকিং হয়ে যেত। এবার ১০ শতাংশ কক্ষও বুকিং হয়নি।

আক্কাস বলেন, 'গত ৮ মাস ধরে একই অবস্থা চলছে। এতে প্রতি মাসে গড়ে ৫ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে আমাদের।'

ছবি: মংসিং হাই মারমা/স্টার

একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে হোটেল হিলভিউয়ের ব্যবস্থাপক তৌহিদ পারভেজ বলেন, 'এক কথায় বলতে গেলে বান্দরবানের পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায় ধস নেমেছে। আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অতি দ্রুত প্রত্যাহার করা না হলে এই শিল্প ‍পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।'

তৌহিদের ভাষ্য, নিষেধাজ্ঞাজনিত অভিঘাতে পর্যটক আসার পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া তাদের প্রতি মাসে গড়ে ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'বান্দরবান সদর, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি ভ্রমণে কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু এসব জায়গার আবাসিক হোটেলগুলোতে ক্ষেত্রবিশেষে ২০-৩০ শতাংশ ছাড় দিয়েও আমরা কাস্টমার পাচ্ছি না।'

ছবি: মংসিং হাই মারমা/স্টার

বান্দরবান জিপ-মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি নাছিরুল আলমও জানান, ঈদুল আজহা সামনে রেখে ১ জুলাই থেকে পুরো মাস বান্দরবান ভ্রমণে প্রত্যেক গাড়িতে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতেও পর্যটক মিলবে কিনা- তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির সঙ্গে। তিনি বলেন, 'পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে রুমা-রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলা ভ্রমণে সাময়িক  নিষেধাজ্ঞা আরোপিত থাকলেও বান্দরবান সদর, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ভ্রমণে কোনপ্রকার বিধিনিষেধ নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রুমা-রোয়াংছড়ি ও থানচির  নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।'

এ ছাড়া পর্যটক টানতে এবারের ঈদে নীলাচল ও মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রের প্রবেশ ফি'র ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই ছাড় বহাল থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English
Drug sales growth slows amid high inflation

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

18h ago