হাতের মুঠোয় ভোটের সব তথ্য

ঢাকায় ২৭ প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার

ভোটাররা যেন সহজেই ভোট সম্পর্কিত সব তথ্য খুঁজে পান, তা নিশ্চিত করতে মোবাইল অ্যাপ চালু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

আজ রোববার সকাল ১১টায় এই অ্যাপটির উদ্বোধন করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং চার নির্বাচন কমিশনার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে অ্যাপটির উদ্বোধন করবেন।

'স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি' নামের অ্যাপটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটারদের নিজ ভোটকেন্দ্রের অবস্থান জানতে সাহায্য করবে। এর জন্য অ্যাপে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিতে হবে।

ভোটাররা তাদের নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীদের নাম এবং নির্বাচনের দিন প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর ভোটের আপডেট পাবেন এই অ্যাপে।

গতকাল দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেন, 'আমরা রোববার অ্যাপটি উদ্বোধন করব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এটি সবার জন্য উন্মুক্ত হবে।'

তিনি বলেন, 'প্রযুক্তি নির্ভর ভোট ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনায় ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় মনোনয়নপত্র অনলাইনে দাখিলে এই মোবাইল অ্যাপস এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। নির্বাচন ব্যবস্থাপনাও এর মাধ্যমে "স্মার্ট বাংলাদেশ" যুগে যুক্ত হলো।'

তিনি আরও বলেন, প্রার্থীরাও এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন। তারা সহজেই ঘরে বসে সঠিক তথ্য উপাত্ত ও প্রয়োজনীয় দলিলাদি দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।

কী আছে এই অ্যাপে

আহসান হাবীব বলেন, 'অ্যাপটি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রতিরোধে সহায়তা করবে। কারণ, মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীদের শোডাউন, মিছিল নিয়ে আসার প্রবণতা রোধ হবে।'

তিনি বলেন, 'এ ছাড়া, অ্যাপের মাধ্যমে মনোনয়ন জমা দেওয়া হলে মনোনয়নপত্র জমা দানে বাধা দেওয়া অথবা প্রত্যাহারের জন্য বল প্রদান করা সম্ভব হবে না।'

তিনি জানান, অ্যাপটি ভোটারদেরকে তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার নাম এবং তাদের জন্য মনোনীত ভোটকেন্দ্রের অবস্থান জানাবে। সংসদ নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকারের যেকোনো নির্বাচনে মনোনয়ন জমাসহ নির্বাচনী সেবা সহজতর হবে এই অ্যাপের মাধ্যমে।

আহসান হাবীব বলেন, 'এর জন্য ভোটারদের শুধু তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে।'

ভোটাররা প্রার্থীদের তথ্যও জানতে পারবেন এই অ্যাপের মাধ্যমে। ভোটার ঘরে বসেই তাদের ভোটার নম্বর জানতে পারবেন। পাশাপাশি তার ভোটার এলাকা বা নির্বাচনী আসন, ভোটকেন্দ্রের নাম, ভোটকেন্দ্রের ছবি, ম্যাপসহ ভোটকেন্দ্রের ভৌগলিক অবস্থান দেখতে পাবেন।

এই অ্যাপের মাধ্যমে বিভাগওয়ারী আসনগুলোর তথ্য দেখা যাবে। এতে পাওয়া যাবে মোট ভোটার, মোট আসন, আসনের প্রার্থী, প্রার্থীদের হলফনামা, আয়কর সম্পর্কিত তথ্য, নির্বাচনি ব্যয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের বিবরণীসহ বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

এ ছাড়া, অ্যাপসটির মাধ্যমে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য জানা যাবে এবং সমসাময়িক তথ্যাবলী নোটিশ আকারে দেখাবে।

আহসান হাবীব বলেন, 'ভোটাররা এই অ্যাপের সাহায্যে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর চলমান ভোটিং কার্যক্রমের তথ্য পাবেন, মোট কতভোট পরেছে তা জানতে পারবেন। এ ছাড়া, নির্বাচনি ফলাফলের সার্বিক অবস্থাসহ "ফলাফল বিশ্লেষণ" নামক অপশনের মাধ্যমে একজন ভোটার আগের নির্বাচন এবং বর্তমান নির্বাচনের ফলাফলের গ্রাফিক্যাল বর্ণনা পাবেন।'

অ্যাপটির মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটি ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে এবং নির্বাচন পরিচালনাকে আরও সহজ করতে সহায়তা করবে।'

বাড়তি সুবিধা

নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেছেন, বছরের পর বছর ধরে অনেক ভোটার অভিযোগ করেন যে তাদের জন্য কোন ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে তা তারা আগে থেকে জানেন না। এ বিষয়ে সহায়তা করার মতো কোনো ব্যবস্থাও ছিল না।

এর আগে প্রার্থীরা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কাছে তাদের ভোটার নম্বর ও ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে তথ্য দিতেন।

তবে গত জাতীয় নির্বাচন এবং কিছু স্থানীয় নির্বাচনে দেখা গেছে, প্রার্থীরা আর ঘরে ঘরে গিয়ে এই তথ্য দিতে আগ্রহী নন।

এই প্রার্থীদের অনেককে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ভোটার নম্বর দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রের কাছে ক্যাম্প স্থাপন করতেও দেখা গেছে।

নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব বলেন, 'অ্যাপটির মাধ্যমে ভোটার নম্বর, ভোটকেন্দ্রের নাম ও ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা থাকায় নিশ্চিতভাবেই ভোটাররা সময়ের অপচয়, বিড়ম্বনা এবং কিছুক্ষেত্রে হয়রানি থেকেও রক্ষা পাবেন। এর জন্য তাদেরকে আর অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে হবে না।'

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, অ্যাপটির জন্য ব্যয় হচ্ছে ২১ কোটি টাকার বেশি।

তবে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম জানান, এই অ্যাপের খরচ প্রায় ১২ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, 'আমাদের একটি সার্ভার সিস্টেম এবং অন্যান্য হার্ডওয়্যার কিনতে হবে, যাতে এক থেকে দেড় কোটি মানুষ একই সময়ে অ্যাপটি অ্যাক্সেস করতে পারে।'

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী সারা দেশে নিবন্ধিত ভোটার রয়েছেন ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন।

Comments

The Daily Star  | English

A budget without illusions

No soaring GDP promises. No obsession with mega projects. No grand applause in parliament. This year, it’s just the finance adviser and his unemotional speech to be broadcast in the quiet hum of state television.

7h ago