গাজীপুর সিটি নির্বাচন

মাকে জেতাতে মরিয়া জাহাঙ্গীর

জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল
জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বারবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নিজের মাকে জিতিয়ে আনার বিষয়ে অনড় সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাইয়ের সময় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে। তবে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন গৃহীত হয়েছে। জায়েদা খাতুনকে জেতাতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন জাহাঙ্গীর।

এরই মধ্যে মায়ের জন্য ভোট চাওয়া শুরু করেছেন সাবেক এই মেয়র।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর ভোগড়া বাইপাস জামে মসজিদে জাহাঙ্গীর বলেন, 'ভবিষ্যতে আর কেউ যেন এ ধরনের অন্যায়ের শিকার না হন, সেজন্য একজন ভালো মানুষকে নির্বাচিত করার জন্য আমি আপনাদের সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমার মাকে মেয়র পদে নির্বাচিত করার জন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।'

তিনি দাবি করেন, তিনি কোনো অপরাধ না করেও অন্যায়ের শিকার হয়েছেন।

'আমি সময় ও অর্থ ব্যয় করেছি এবং জনগণের সেবা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমি আমার মায়ের পাশে আছি,' যোগ করেন তিনি।

গতকাল দুপুরে গাজীপুর শহরের ভোগড়ায় জাহাঙ্গীরের বাড়িতে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জায়েদা বলেন, তার ছেলেকে 'অন্যায়ভাবে' মেয়র পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি মেয়র নির্বাচিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

জায়েদা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে তার ছেলের ভালো কাজের কথা মাথায় রেখে মানুষ তাকে ভোট দেবে। 'আমি মেয়র নির্বাচিত হলে ছেলের অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করব।'

গত বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) মির্জা আজম বলেছেন, দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে ফেরার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান আজম।

তিনি বলেন, 'দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার পরেও শেখ হাসিনা একবার জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করেছিলেন। তিনি ক্ষমাপ্রার্থনার সময় বলেছিলেন যে আর কখনো এমন কিছু করবেন না, যা দলীয় শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে যায়। সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাকে শাস্তি পেতেই হবে।'

জাহাঙ্গীর ২০১৮ সালের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করায় ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কারের ৭ দিন পর তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করে সরকার।

গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। ২১ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দল তাকে ক্ষমা করে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে না পেরে গত ২৭ এপ্রিল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন জাহাঙ্গীর। তবে, তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

নির্বাচনে তার মায়ের মনোনয়ন বৈধ ঘোষিত হয়েছে।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ আগামীকাল।

২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আওয়ামী সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাহর সমর্থনে কাজ করেননি।

আওয়ামী লীগের 'বিদ্রোহী' প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নেওয়ার পর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি 'নিখোঁজ' হয়ে যান। পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের চাপে তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

তবে তিনি ঘোষণা দেওয়ার আগেই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যালটে তার নাম ছিল।

গাজীপুর আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হলেও আজমত উল্লাহ ওই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত এম এ মান্নানের কাছে ১ লাখের বেশি ভোটে হেরে যান।

 

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

US customs will apply a tariff rate only to the non-American portion of a product's value

10h ago