গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ কম

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, গাজীপুর, টঙ্গী, আজমত উল্লা, জায়েদা খাতুন, জাহাঙ্গীর,
ছবি: সংগৃহীত

আগামী বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কিন্তু, কেউ যদি এই মুহূর্তে গাজীপুর শহরে যান, তাহলে মনেই হবে না এখানে কোনো নির্বাচন হচ্ছে। ভোটারদের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কম বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সেখানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ছাড়া উল্লেখ করার মতো কোনো নির্বাচনী প্রচারণা চোখে পড়েনি। এমনকি শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেও খুব বেশি পোস্টার দেখা যায়নি। এই নির্বাচনে ভোটারদের উৎসাহের অভাব আছে বলে মনে হবে। সোমবার মধ্যরাতে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাহ দলের স্থানীয় নেতাদের সমর্থনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন নির্বাচনী প্রতীক 'টেবিল ঘড়ি' নিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।

শহরের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এবারের নির্বাচনে নীরব ভূমিকা পালন করতে চান এবং নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি কেমন হয় তা দেখতে চান।

শহরের রিকশাচালক বিপ্লব বলেন, 'শুধু নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতরা ভোট নিয়ে আগ্রহী।'

চৌরাস্তা এলাকার স্পোর্টস গিয়ার স্টোরের মালিক ড্যানিয়েল সরকার গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ অনেক কম। কারণ, ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।'

তিনি জানান, সাধারণত কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনের আগে পরিবেশ জমিয়ে তোলেন। কিন্তু, এবার তারা খুব বেশি প্রচারণা চালাচ্ছেন না।

'এবারের ভোট নিয়ে আসলে মানুষের আগ্রহ অনেক কম,' বলেন তিনি।

মানুষের আগ্রহ কম মনে হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে ড্যানিয়েল বলেন, 'সব জায়গায় নৌকা (আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক)। আর মানুষ জানে কী ঘটতে পারে। এটাই সম্ভবত কারণ।'

তবে, ড্যানিয়েলের সঙ্গে একমত হতে পারেননি একই এলাকার আমির উদ্দিন মোল্লা।

আমির উদ্দিন মোল্লা বলেন, 'অনেকে মনে করছেন নির্বাচন একতরফা হবে। কিন্তু, গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের প্রচুর সমর্থক আছে, তাই নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। কারণ, জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা নীরবে পর্দার আড়ালে কাজ করছেন।'

'জায়েদা খাতুন (স্বতন্ত্র ও জাহাঙ্গীরের মা) অবশ্যই আজমতের সঙ্গে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে এজন্য নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে,' বলেন তিনি।

২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে গাজীপুরের মেয়র নির্বাচিত হওয়া জাহাঙ্গীর এবারও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু, এবার আজমতকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

জাহাঙ্গীর নিজের ও মায়ের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু, নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাইয়ের সময় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়। জাহাঙ্গীর তার মায়ের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

যেহেতু বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে, তাই ভোটের মূল লড়াই হবে আজমত ও জায়েদার মধ্যে।

স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর ক্ষমতাসীন দলের দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা জায়েদার পক্ষে কাজ করছেন। জায়েদা টঙ্গী এলাকায় কত ভোট পেতে যাচ্ছেন তা নিয়ে আজমতকে অবশ্যই চিন্তার মধ্যে থাকতে হবে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, তাদের অধিকাংশ নেতাকর্মী আজমতকে সমর্থন জানালেও জাহাঙ্গীরের অনুসারীরা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট নাও দিতে পারে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, 'আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু, অনেকে বাধ্য হয়ে বা দলীয় শাস্তির ভয়ে তা করছেন।'

২০২১ সালের নভেম্বরে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পরেও জাহাঙ্গীর তার অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।

জাহাঙ্গীরের অনুগত প্রায় ২০০ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। ২০০ জনের মধ্যে অন্তত ১৯ জন নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদের এবং বাকিরা বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মী।

দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, এই নেতারা এখন আজমতের পক্ষে প্রচারণা চালালেও তাদের অভিযোগ আছে।

জাহাঙ্গীর বলেন, 'হ্যাঁ, প্রচারণায় নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে নেই। তবে সব কর্মী-সমর্থক আমার সঙ্গে আছেন। শাস্তির ভয়ে তারা প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতে পারছেন না।'

২০২১ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হলে জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

পরে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সাধারণ ক্ষমা মঞ্জুর করার পর ৬১ জন কাউন্সিলর জাহাঙ্গীরকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে পুনর্বহালের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান।

এরপর ওই কাউন্সিলরদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কাউন্সিলররা জনসমক্ষে বলছেন, তারা এখন আজমতের সঙ্গে আছেন। তবে, অনেক ভোটার তাদের এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

আজমতের আরেকটি দুশ্চিন্তা হলো তিনি টঙ্গী থেকে প্রয়োজনীয় ভোট নাও পেতে পারেন। যদিও তার বাড়ি টঙ্গীতে এবং ৩ বার পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাগ্নে ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি টঙ্গীতে বেশ জনপ্রিয়।

রনির মতো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীও টঙ্গীর।

গাজীপুর জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে।

যাইহোক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫২টি ওয়ার্ডের মেয়র ও কাউন্সিলর কে হবেন তা আগামী বৃহস্পতিবার নির্ধারণ করবেন প্রায় ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮৬ জন ভোটার।

 

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

3h ago