ইভিএম

দেড় লাখের ৪০ হাজার মেরামত অযোগ্য, বাকিগুলোর জন্য প্রয়োজন ১২৬০ কোটি

ইভিএম। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে দেড় লাখ ইভিএম কিনেছে প্রতিটি ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়, যা ভারতের তুলনায় প্রায় ১১ গুণ বেশি।

বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রায় ৫ বছর পর এসে ওই দেড় লাখের মধ্যে ৪০ হাজার ইভিএম মেরামতের অযোগ্য এবং বাকি ১ লাখ ১০ হাজার মেরামত করা গেলেও এর জন্য প্রায় ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে মেশিন টুলস কারখানার কর্মকর্তারা এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, মাঠপর্যায়ের নির্বাচন অফিস বা স্কুলরুমে ইভিএমগুলো অসতর্কতার সঙ্গে বসানোয় সেগুলোর কন্ট্রোল ইউনিট, মনিটর, ব্যাটারি ও ক্যাবলগুলো এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিএমটিএফ কর্মকর্তারা ইভিএমগুলো ব্যবহারযোগ্য করতে রিফারবিশ করার জন্য অর্থ চেয়েছিল। রিফারবিশ মানে ইভিএমের ব্যাটারি, কেবল, টাইমার ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হবে।'

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিএমটিএফের সঙ্গে আলোচনার হয়েছে। একমাত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা সব ইভিএমের রিফারবিশমেন্টের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে। কমিশন তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করছে। আর্থিক সঙ্গতিসাপেক্ষে কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।'

চলতি বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করেছে ইসি। সেটাকে মাথায় রেখে গত বছরের আগস্টে ইসি পরিকল্পনা করেছে যে, তারা সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করবে।

সেই সময় ইসি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তারা ৭০-৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে পারবেন এবং ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে আরও বেশি ইভিএম প্রয়োজন হবে।

সেই অনুযায়ী ২ লাখ নতুন ইভিএম কেনার জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে ইসি।

কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে সরকার প্রকল্পটি স্থগিত করে দেয়, যার ফলে কমিশন আগামী সাধারণ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে মেশিন ব্যবহারের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে ইসির অভ্যন্তরীণ এক কর্মশালার প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, সারাদেশে জেলা ও উপজেলায় ইসির ফিল্ড অফিস ও স্কুলরুমে ৯৩ হাজার ইভিএম রয়েছে।

আর এসব মেশিনের ৩০ শতাংশই এই মুহূর্তে ব্যবহারের অনুপযোগী।

গতকাল ইভিএম প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ফিল্ড অফিসে ৭৫ হাজার ৪০৪টি, বিএমটিএফে ৭৩ হাজার ৮১০টি এবং ইভিএম কাস্টমাইজেশনে বাকি ইভিএমগুলো রয়েছে।

এ পর্যন্ত ইসির ১০টি অঞ্চলের মধ্যে ৫টিতে ইভিএমের মান যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মোট ৪৩ হাজার ৬২৪টি ইভিএম পরীক্ষা করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ২৭ হাজার ২২৩টি বা ৬২ শতাংশের কোনো না কোনো ধরনের মেরামত প্রয়োজন।

আরও ৫টি অঞ্চলে কমপক্ষে ২৫ হাজার ইভিএম মেরামতের প্রয়োজন হতে পারে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক রয়েছে এবং সেখানে এক হাজার ২৬০ কোটি টাকার বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।

নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, বর্তমান প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ ইভিএম সংগ্রহ করা হয়। ২০১৮ সাল থেকে এসব ইভিএমের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৪৩টি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ইভিএম গত ৫ বছরে গড়ে ৩ থেকে ৪ বার সব ধরনের নির্বাচনে ব্যবহার হয়েছে। এ ছাড়া আগামী জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। যেহেতু প্রতিটি ইভিএম বিভিন্ন নির্বাচনে একাধিকবার ব্যাবহার হয়েছে এবং এর ওয়ারেন্টি ও সার্ভিস সাপোর্টের মেয়াদও জুনে শেষ হবে, ফলে জাতীয় নির্বাচনে এসব ইভিএম ব্যবহারের জন্য নির্বাচন এর পূর্বে প্রতিটি ইভিএমের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি ও আবশ্যক।'

গত ৭ মে আওয়ামী লীগের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০০ আসনেই ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দেওয়ার পর ইভিএম ইস্যুটি সামনে আসে।

ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের জোটের কিছু শরিক দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে থাকলেও নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তত ১৯টি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর বিরোধিতা করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
Chattogram port Imports

Reducing penalty on false declarations will encourage smuggling: experts

In the Finance Ordinance 2025–26, presented on Monday, the government proposed amending the Customs Act 2023 and revising the penalty structure for tax evasion related to intentional false declarations during import clearance, reducing the minimum fine from twice the evaded amount to an equivale

34m ago