ইভিএম নিয়ে শঙ্কা-উৎকণ্ঠার মধ্যেই চলছে রসিক নির্বাচন

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন
রংপুর সিটি করপোরেশনের আলমনগর কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ২৭ ডিসেম্বর ২০২২। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা আর উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে তৃতীয় রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হয় মহানগরীর ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। এটি চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্তভ প্রতিটি কেন্দ্রে ৩ সেট ইভিএমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।

গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে সবগুলো কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছে। রংপুর পুলিশ লাইনস মাঠ থেকে সব কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার সেট ইভিএম বিতরণ করা হয়।

২২৯টি ভোটকেন্দ্র ও এর আশেপাশে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮৬ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, এক সাব-ইনস্পেক্টরসহ ৩ সশস্ত্র পুলিশ সদস্য ও ২ সশস্ত্র আনসারসহ ১২ আনসার সদস্য প্রতিটি কেন্দ্রে মোতায়েন থাকছেন। প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পাহারা দিতে ২ সশস্ত্রসহ ৪ সশস্ত্র পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্যকে নিয়োজিত করা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৬ মহিলা আনসার সদস্যও থাকছেন।

এ ছাড়াও, বিজিবি, র‌্যাব ও এপিবিএনের (সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়ন) সম্মিলিত দল আজ নির্বাচনের সময় যেকোনো সংকট মোকাবিলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছে। ১১ প্লাটুন বিজিবি ও ১৬ প্লাটুন র‌্যাব ‍স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।

আরসিসির ৩৩টি ওয়ার্ডে প্রায় ৩৩ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৬ জুডিশিয়ারি ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হচ্ছে।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আবদুল বাতেন প্রিসাইডিং অফিসার ও পুলিশ সদস্যসহ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে আহ্বান জানান।

রংপুর পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ, আনসার ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সমাবেশে তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত রসিক নির্বাচনের সবকিছুই শান্তিপূর্ণ আছে। অনিয়মের অভিযোগ পেলে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে সেটি তার ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা। সংশ্লিষ্ট বিভাগে এর দায় নেবে না।'

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন
রংপুর সিটি করপোরেশনের আলমনগর কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। ২৭ ডিসেম্বর ২০২২। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও বলেন, 'আগেও কেউ রেহাই পায়নি, এবারও নয়।'

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নুরে আলম মিনা তার বক্তব্যে এক্ই কথা বলেন।

১৭ দিনব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা রোববার রাতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া তেমন বড় কোনো সংঘাতের সংবাদ পাওয়া য়ায়নি।

এমনকি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগও করা হয়নি প্রচারণার সময়।

গত ৯ ডিসেম্বর রসিক নির্বাচনের প্রচার শুরু হয়।

মেয়র পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, ৩৩টি কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং ১১টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন মহিলা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

৯ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টি প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমানসহ ২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির সোমবার টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুর জাপার শক্ত ঘাঁটি। সব দিক থেকে সবকিছু এখনো আমাদের পক্ষে। আমরা আশ্বাস পেয়েছি যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।'

তিনি বলেন, '২২৯টি কেন্দ্রে জাপা নেতাকর্মীরা থাকবেন এবং তাদের যে কোনো সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।'

এদিকে নগরবাসী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে রসিকের উন্নয়নের স্বার্থে ভোট দেবেন বলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না।'

আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডালিয়া বলেন, 'রসিকের উন্নয়নের কথা ভেবে নগরবাসী নৌকায় ভোট দেবে।'

অপরদিকে মেয়র পদে জাপা প্রার্থী মোস্তফা বলেন, 'রংপুর নগরবাসী ব্যক্তি মোস্তফা ও গত পাঁচ বছরের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে আমাকে ভোট দেবেন।'

তবে, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। কারন হিসেবে তিনি বলেন, 'রংপরের অধিকাংশ মানুষ এখন পর্যন্ত ইভিএম নিয়ে কিছু জানে না।'

২০১২ সালে রংপুর সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাপা সমর্থিত প্রার্থী মোস্তফাকে হারিয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু।

কিন্তু ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে মোস্তফা ঝন্টুকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।

এবারের নির্বাচনে রসিকের ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। গত নির্বাচনের তুলনায় এ বছর ভোটার বেড়েছে প্রায় ৩২ হাজার ৪৭৫ জন।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

3h ago