নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া নিয়ে যা বলছেন আ. লীগ নেতারা

সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। ছবি: নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

নির্বাচনের মাত্র দুদিন আগে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নজিবুল চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দেশের মুষ্টিমেয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে একজন, যিনি একই আসন থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।  

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নজিবুল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তবে ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেননি।

২০০৫ সালে নজিবুল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। তিনি দলের চেয়ারম্যান হন।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নজিবুল চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করলেও তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তার পরিবর্তে এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ারকে চট্টগ্রাম-২ আসনে দলীয় প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে মনোনয়ন না পেয়ে নজিবুল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম-২ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।

তবে বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ করেই ফটিকছড়ি উপজেলায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতেই তার এই উদ্যোগ।

তিনি বলেন, তিনি এ আসন থেকে চার মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং এর মধ্যে তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। তাই তিনি মনে করেন, তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ভোট ব্যাংক বিভক্ত হবে, যা নৌকার প্রার্থীর বিজয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। 

তাই নৌকার প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, 'যেহেতু ১৪ দলীয় জোটের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই ফটিকছড়িতে নৌকা প্রতীকে তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তাই তাকে সম্মান করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৪ দলীয় জোটের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং ফটিকছড়ির সার্বিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করছি।'

তবে ভোটের মাত্র দুদিন আগে তার নির্বাচন ছাড়ার ঘোষণা স্থানীয়ভাবে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টার আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ইউনিট ও ফটিকছড়ি উপজেলা ইউনিটের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের কেউ কেউ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

তবে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নজিবুলের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তারা বলেন, ভোটের মাত্র দুদিন আগে নির্বাচনের ময়দান ছেড়ে দেওয়া নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।   

যদিও তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই তার জন্য ভালো হতো বলে উল্লখে করে এই নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অঙ্গীকার করছেন।

তবে নজিবুল ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাতে পারতেন না বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, 'নজিবুল তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং সব ভোটই নৌকা প্রতীকের ভোট।'

একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, 'ব্যক্তি হিসেবে ফটিকছড়িতে তার ভোট ব্যাংক নেই।' 

আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন, 'নজিবুল জানেন, নৌকা প্রতীক ছাড়া তিনি জিততে পারবেন না। তাই তিনি নির্বাচন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।'

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান বলেন, নজিবুলের নির্বাচন ছাড়ার ঘোষণার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, 'নজিবুল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করলেও ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা না থাকায় তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'নজিবুল গণমানুষ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন। তার কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি যদি নৌকা প্রতীকে আসার ঘোষণা দেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাই।'

যোগাযোগ করা হলে নজিবুল ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি ফটিকছড়ি থেকে চার মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং উপজেলায় তার অনেক বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে।

'আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাতে ভোট ব্যাংক বিভক্ত না হয়। প্রধানমন্ত্রী নৌকা প্রতীকে ফটিকছড়িতে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমি তার সিদ্ধান্তকে সম্মান দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।'

তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে যে চ্যালেঞ্জ আসবে তা আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। নির্বাচন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য অপরিহার্য।'

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

11h ago