সাভার ও ১১ জেলায় ১৫৫ মামলা, গ্রেপ্তার ২১৯০
কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, হামলা ও নাশকতার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা ও গ্রেপ্তার চলছে।
সাভার
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাভারে সহিংসতার ঘটনায় সাভার মডেল থানায় মোট ১৩টি মামলা হয়েছে এবং আশুলিয়া থানায় হয়েছে ৬টি মামলা।
গত ১৭ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
এসব মামলায় সাভার মডেল থানায় মোট ১২৯ জন এবং আশুলিয়ায় ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাভার মডেল থানায় দায়ের করা ১৩টি মামলার মধ্যে ৫টি মামলার বাদী পুলিশ। ৪টি মামলা করেছে পুড়ে যাওয়া চার বাস কর্তৃপক্ষ। একটি করে মামলার বাদী সাভার উপজেলা প্রশাসন, সরকারি পশু হাসপাতাল, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও এনটিভির ক্যামেরা পারসন।
১৩টি মামলার কপি হাতে পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার।
সাভার মডেল থানায় বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন ধারায় পুলিশের দায়ের করা ৫টি মামলায় সাভারের বিএনপি, জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ মোট ৩৮৪ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এসব মামলায় বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের অজ্ঞাত অনেককে আসামি করা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাত ৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সরকারি পশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
চারটি বাস পোড়ানোর ঘটনায় পৃথক বাস কর্তৃপক্ষের দায়ের করা চারটি মামলায়, বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের মোট ২৩০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত অনেককে আসামি করা হয়েছে।
বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির ক্যামেরাপারসন জায়েদ আনসারিকে মারধর ও সাথে থাকা মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে চলমান আন্দোলনে সাভার থানা এলাকায় গুলিতে ১০ জন নিহতের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলাও দায়ের করা হয়নি।
আশুলিয়ার ৬টি মামলার মধ্যে ৫টিরই বাদী পুলিশ।
এর মধ্যে পুলিশের দায়ের করা একটি মামলায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নবীন রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ইতিহাস বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী, অর্থনীতি বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাগর ও ইতিহাস বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিরনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলাটিতে আরও ৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা শিক্ষার্থী নয় বলে জানা গেছে। মামলাটিতে অজ্ঞাত অনেক কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া বাকি চারটি মামলায়, বিএনপি, জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত অনেককে আসামি করা হয়েছে বলে জানান আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এ এফ এম সায়েদ।
গাজীপুর
গত ১৭ জুলাই থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত ৩৭টি মামলা হয়েছে। ডিসি মিডিয়া নাজির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এসময় মোট ৩৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় গাজীপুরে মহানগরের আট থানা ও জেলার পাঁচ উপজেলা থেকে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে আজ দুপুর ১২টার মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা সাম্প্রতিক নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি।
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এনিয়ে গত ১৮ জুলাই থেকে দায়ের করা ১১টি মামলায় মোট ১৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পাঁচটি থানায় এসব মামলা করা হয়েছে।
বগুড়া
বগুড়ার দুই থানায় মোট ১৫টি মামলা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬ জনকে। জেলা পুলিশ সুপার জাকির হাসান জানান, এ পর্যন্ত মোট ১৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার সদর উপজেলায় ২ মামলায় মোট ৭৭ জনকে আটক করা হয়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৭ জুলাই সদর উপজেলায় একটি মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানান থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসান।
রাজশাহী
শনিবার পর্যন্ত রাজশাহীর নয়টি উপজেলায় ১০টি এবং রাজশাহী মহানগরীতে ৭টি মামলা হয়েছে। মামলায় দুই শতাধিক নামীয় ও অজ্ঞাতনামা কয়েকশ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনকে গ্রেপ্তারসহ নয়টি মামলায় তারা ১৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে তারা গত ২৪ ঘণ্টায় শুক্রবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০৯ জন।
জামালপুর
জামালপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা ১০ মামলায় ২ হাজার ৩৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলাগুলোর মধ্যে জামালপুর সদরে ৬টি, ইসলামপুরে ১টি, সরিষাবাড়ীতে ১টি, বকশীগঞ্জে ১টি ও দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানায় ১টি মামলা হয়েছে নয় দিনের মধ্যে।
মামলায় মোট ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সদর উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে বলে সদর থানা সূত্রে জানা গেছে।
জেলায় কোনো শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়নি।
ফেনী
ফেনীতে গত ১০ দিনে দুই মামলায় ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় পাঁচ জন এবং ছাগলনাইয়া উপজেলার একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেনী সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. এমরান হোসেন ফেনীতে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের করা দুটি মামলায় ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার ও আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান।
নাশকতার ২টি মামলায় একটিতে ২১ জনের নাম ও অপরটিতে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং দুই মামলায় ৩৫০ জনকে অজ্ঞাত পরিচয়সহ মোট ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, তাদের শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার সাধারণ কর্মীদেরও পুলিশ খোঁজা খুঁজি করছে।
মাদারীপুর
মাদারীপুরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরসহ নাশকতার ১০ মামলায় বিএনপি, জামায়াত ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীসহ ৯৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মাদারীপুর পুলিশ।
গত ৭ দিনে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানানো হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, পুলিশ বাদি হয়ে ৪টি মামলা দায়ের করেছে। পাশাপাশি এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আরও ৬টি মামলা দায়ের করেছে।
সবগুলো মামলায় আড়াই হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা আজ দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন মাদারীপুর জেলা জামাত ইসলামের সেক্রেটারি মো. মোখলেসুর রহমান, জামাতের পৌর শাখা নায়েবে আমির আলমগীর হোসেন, মাদারীপুর জেলা সাবেক ছাত্রশিবিরের সভাপতি গোলাম আযম ইরাত, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য তোফাজ্জল হোসেন সান্টু, সদর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল ফকির, গণঅধিকার পরিষদের মাদারীপুর জেলা শাখার সেক্রেটারি শাহরিয়ার মনির।
নারায়ণগঞ্জ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে সহিংসতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নতুন দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলার পাঁচটি থানায় মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪টি।
আজ শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত আরও ৫১ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮৭ জনে।
বরিশাল
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এনিয়ে সাত মামলায় মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১৩৪ জন।
বিএমপির পুলিশ কমিশনার মো. জিহাদুল কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় ছয় দিনে মোট ১০০ এবং শুক্রবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
Comments