হোলি আর্টিজান হামলার ৮ বছর: অ্যাপের মাধ্যমে নতুন সদস্য টানছে জঙ্গিরা

২০১৬ সালের ১ জুলাই অস্ত্রধারী জঙ্গিরা গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যা করে। ফাইল ফটো

সিরিয়া এবং এর আশেপাশে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস, এর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে আইএস-অনুপ্রাণিত নব্য জেএমবিও আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের জুন থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গিবাদে অভিযুক্ত অন্তত ৩১৫ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছে এবং তাদের মধ্যে প্রায় ৭০ জন সন্দেহভাজন নব্য জেএমবি সদস্য।

কর্মকর্তারা বলছেন, এই সন্দেহভাজনদের অনেকেই বোমা বানাতে জানে এবং যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছে, যে কারণে এরা এখন উদ্বেগের কারণ।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিটিটিসির পাঁচ জন কর্মকর্তা জানান, তাদের অনেকেই নব্য জেএমবির চার-পাঁচটি অনলাইন গ্রুপে যোগ দিয়ে থাকতে পারেন।

এর মধ্যে কয়েকটি গ্রুপের ৫০০ জনেরও বেশি সদস্য বা অনুসারী রয়েছে, যারা নাশকতামূলক কাজ করার সুযোগ খুঁজছে বলে ধারণা কর্মকর্তাদের।

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের গবেষণা বলছে জামিনে থাকা জঙ্গিদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মৌলবাদী ভাবধারা থেকে ফিরে থাকতে পারে।  

তিনি বলেন, 'জামিনে থাকা জঙ্গিদের প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট থানায় হাজিরা দেওয়ার কথা। তাদের প্রত্যেককে মনিটরিং করার সক্ষমতা আমাদের নেই, তবে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।'

কর্মকর্তারা বলেন, গত বছরের ৩ আগস্ট মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন আল হাফস আল কোরাইসি। কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে এবং চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দুটি আলাদা বার্তায় হাফস আইএস অনুপ্রাণিত সব জঙ্গিকে সংগঠিত হতে এবং বিধ্বংসীমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার আহ্বান জানান।

পরবর্তীতে ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে আইএসের বেশ কয়েকটি হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে, যোগ করেন তারা।

এসব বার্তায় অনুপ্রাণিত হয়ে নব্য জেএমবির সদস্য যারা ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর থেকে নিষ্ক্রিয় ছিল, তারা সংগঠিত হতে শুরু করেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, ওই দুই বছরে অভিযানে শীর্ষ নেতাসহ ৬৯ জঙ্গি নিহত হয়।

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নব্য জেএমবির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। হামলায় বিদেশি, দুই পুলিশ সদস্যসহ ২২ জনকে হত্যা করা হয়।

হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার পর জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ২০০ জন, নব্য জেএমবির ১২৮, আনসার আল ইসলামের ২৩০, হুজি-বি'র ১৫, হিযবুত তাহরীরের ১২০, ইমাম মাহমুদের কাফেলার ৪১, জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার ১৮ জন এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সন্দেহে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।

সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এস কে ইমরান হোসেন জানান, 'জামিনে থাকা আসামিদের ওপর আমরা নজর রাখছি।'

নতুন নেতৃত্ব

গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে নব্য জেএমবির নতুন প্রধান মাওলানা আবু বকর মধ্যপ্রাচ্যের কোথাও লুকিয়ে আছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আবু বকর আফগানিস্তানে কিছুদিন কাটিয়েছেন এবং এর আগে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

এক বছর আগে সিটিটিসির গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তুরস্কে আবুল আব্বাস আল বাঙালি ওরফে মাহাদী হাসান জন গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার জায়গায় দায়িত্ব পান বকর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বকর কিছু অনুসারীকে তহবিল সংগ্রহ করে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র কেনার দায়িত্ব দিয়েছেন।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় কেবল টিভি নেটওয়ার্ক হ্যাক করে দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কনটেন্ট 'সম্প্রচার' করার পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি।

সব সদস্যকে একটি একক প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনা, চেইন অব কমান্ডের অধীনে পৃথক সেল গঠন এবং অন্যান্য ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে 'ব্যবধান' কমিয়ে আনারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

সিটিটিসি ইউনিটের উপ-কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, 'নব্য জেএমবি কিংবা আনসার আল ইসলামের মতো সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তথাকথিত ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্য । মতাদর্শিক মিল থাকায় অদূর ভবিষ্যতে তারা এক প্ল্যাটফর্মে আসতেও পারে।'

সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৭ মে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সামনে শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণ ঘটায় সংগঠনটি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নজরদারি এড়াতে সদস্যরা যোগাযোগের জন্য থ্রিমা, উইকার মি এবং টেলিগ্রাম ব্যবহার করছে।

সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, 'সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। হোলি আর্টিজানের মতো হামলা চালানোর সক্ষমতাও জঙ্গিদের নেই। কিন্তু অনলাইনে তাদের অনেক সহানুভূতিশীল ও সমর্থক রয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

5h ago