সালিশে উপস্থিত ছিলেন দুই পুলিশ সদস্য, থানায় যেতে বাধা
কুড়িগ্রামে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি জয়নাল আবেদিন ওরফে কসাই আবেদিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার চার আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগী গৃহবধূর পরিবার অভিযোগ করেছে, ধর্ষণের বিচারে গ্রামে যে সালিশ বসে তাতে উপস্থিত ছিলেন থানার দুই কনস্টেবল। বিচার না পেয়ে থানায় যেতে চাইলে দুই পুলিশ সদস্য ও গ্রামের মাতব্বর তাদের বাধা দেন।
এ ঘটনায় মামলার পর থেকে মাতব্বর আমেজ উদ্দিন পলাতক আছেন।
গৃহবধূর পরিবার জানায়, গত ২৪ মে দুপুরে ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও তার স্বামী বিষপান করেন। স্বামী বেঁচে ফিরলেও মারা যান ওই গৃহবধূ। তার আগের দিন রাতে গৃহবধূর বাড়িতে একটি সালিশ বৈঠক বসান গ্রামের মাতব্বর আমেজ উদ্দিন। সেখানে পুলিশের পোশাক পরে উপস্থিত ছিলেন চর রাজিবপুর থানার কনস্টেবল রবিউল ইসলাম ও থানার ওসির গাড়িচালক কনস্টেবল মাজহারুল ইসলাম। ধর্ষণে অভিযুক্ত চার আসামিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল আসামিদের। সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে গৃহবধু ও তার স্বামী থানায় যেতে চাইলে মাতব্বর ও পুলিশের দুই সদস্য তাদের বাধা দেন।
নিহত গৃহবধূর স্বামী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২৩ মে থানায় গিয়ে মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গ্রামের মাতব্বর ও পুলিশ সদস্যের বাধার কারণে তা পারিনি। যেহেতু তারা বিচার পাইনি আর ঘটনাটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাই আমরা দুজন একসাথে বিষপানে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বেঁচে গেলেও তার স্ত্রী মারা যায়। গত ২৯ মে স্ত্রীর মরদেহ পুলিশি ঝামেলা ছাড়াই দাফন করার কথা বলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য তার কাছে সাদা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন বলে জানান তিনি।
অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মরদেহ দাফনে গৃহবধূর স্বামীর সম্মতির জন্য আমি ফাঁকা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নিয়েছিলাম। পরে স্ট্যাম্পটি ফেরত দিয়েছি। এটা করা ঠিক হয়নি।'
অভিযোগ নিয়ে জানতে পুলিশ কনস্টেবল মাজহারুল ইসলামকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
চর রাজিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান গত রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সালিশ বৈঠকে দুই পুলিশ সদস্যের উপস্থিত থাকার বিষয়টির প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন পারিবারিক কলহের কথা শুনে তারা সেখানে গিয়েছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়ে ওই দুই পুলিশ সদস্য আমাকে জানাননি।
তিনি বলেন, পলাতক অপর দুই আসামিতে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গ্রাম্য মাতব্বরকেও খোঁজা হচ্ছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (রৌমারী সার্কেল) মমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আসামি জয়নাল আবেদীন তার দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, তিনি বলেন।
চর রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানভীর আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গৃহবধূকে ব্লাকমেইল করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ঘটনাটি গুরুতর। নিহত গৃহবধূর তিন বছর বয়সের একটি সন্তান রয়েছে। শিশু ও তার বাবার পুনর্বাসনে উপজেলা প্রশাসন থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Comments