সড়ক দুর্ঘটনার আড়ালে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, জানা গেল দেড় বছর পর

নরসিংদীতে গাড়ি চাপায় দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশ 'দুর্ঘটনা' হিসেবে প্রতিবেদন দিলেও সেটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

২০২১ সালের ১২ আগস্ট নরসিংদীর শিবপুরে একটি মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেলে থাকা শাহ আলম বিপ্লব ও মনির হোসেন মারা যান। পিবিআই জানিয়েছে, মামুন মিয়া নামের একজন তার আট সহযোগীকে মাইক্রোবাসে নিয়ে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেন। মামুন মিয়া অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বিপ্লবের সঙ্গে ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে মামুন গাড়িচাপা দিয়ে বিপ্লবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

ওই ঘটনার পর বিপ্লব ও মনিরের মরদেহ উদ্ধার করে হাইওয়ে পুলিশ মাইক্রোবাসের চালকের বিরুদ্ধে মামলা করে। হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক খাজা মাইনুদ্দিন মামলাটি তদন্ত করেন। মাইক্রোবাসের পলাতক চালক মাসুম মিয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন তিনি। চার্জশিটে একে সড়ক দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়।

পরে আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে চার জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিন জন নরসিংদীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বিপ্লবের এক সময়ের ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায় অংশীদার মামুন মিয়া, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের মালিক মাসুম মিয়া এবং মামুনের দুই সহযোগী সোহাগ মিয়া ও মাসুদ মিয়া। মামুন, সোহাগ ও মাসুদ আদালতে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

যেভাবে বিপ্লবকে হত্যার পরিকল্পনা

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, বিপ্লব চারটি হত্যাসহ ১০টি মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্য দিতে সাহস করত না।

পিবিআইয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নরসিংদীর রায়পুরার লোচনপুর বাজারে দুলাল গাজী নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বিপ্লবকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছিলেন দুলালের ছেলে রবিন গাজী। পরে বিপ্লবকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করে পিবিআইয়ের এসআই নাসিম।

পিবিআই নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বিপ্লবকে গ্রেপ্তারে সহায়তা করায় একই পরিবারের সদস্য জুয়েল (২২) ও নাঈম (২৩) নামের দুজনকে পরে ডাকাত আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

পরে জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে বিপ্লব এসআই নাসিমের বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ সদরদপ্তরে অভিযোগ করেন। এই অভিযোগ তদন্তের জন্য জেলা পুলিশকে দায়িত্ব দেয় পুলিশ সদরদপ্তর। এই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পান একজন অতিরিক্ত এসপি। অভিযোগের ব্যাপারে আলোচনার জন্য তিনি বিল্পবকে এসপির কার্যালয়ে ডেকেছিলেন।

এসপির কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মনিরের মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন বিপ্লব।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, বিপ্লবকে অনুসরণ কারা মাইক্রোবাসের দিয়ে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

পিবিআই প্রধান বলেন, আসামিরা ১৫-২০ দিন আগে পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। এর আগেও দুবার চেষ্টা করে তারা বিপ্লবকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Doubts growing about interim govt’s capability to govern: Tarique

"If we observe recent developments, doubts are gradually growing among various sections of people and professionals for various reasons about the interim government's ability to carry out its duties."

23m ago