ধর্ষণের সাজা এড়াতে নাম-ধর্ম পরিচয় গোপন, ৩ বছর পর গ্রেপ্তার

ধর্ষণের সাজা থেকে বাঁচতে মো. সবুজ নাম নিয়েছিলেন সুপন চন্দ্র দেবনাথ। বুধবার রাতে কুমিল্লা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় কিশোরীকে ধর্ষণের মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ জানায়, নাম ঠিকানার পাশাপাশি নিজের ধর্ম পরিচয় গোপন করে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

বুধবার রাতে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ছাতিপট্টি এলাকায় একটি জুয়েলারির দোকান থেকে সুপন চন্দ্র দেবনাথ (২৫) নামের ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের খুলশী থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পুলিশ জানায়, সুপন কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানার হেসাখাল গ্রামের রাধা কৃষ্ণ দেবনাথের ছেলে। তিনি মো. সবুজ নাম নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। এমনকি মামলার এজাহার, চার্জশিট ও সাজা পরোয়ানায় তার এই নাম আছে। বাবার নাম আছে মো. আক্কাস ও মায়ের নাম শেফালী বেগম। বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায়।

মামলার এজাহার অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৯ জুন চট্টগ্রামের লালখান বাজারে ১৪ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে 'মো. সবুজের' বিরুদ্ধে খুলশী থানায় মামলা করেন ওই কিশোরীর মা। মামলা চলাকালে তিনি জামিনে ছাড়া পান। পরে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেন। আসামি পলাতক থাকায় খুলশী থানায় সাজা পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

খুলশী থানা পুলিশ জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী গ্রেপ্তার যুবকের নাম সুপন। তিনি সাজা এড়াতে নিজের আসল পরিচয় গোপন করেছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তার নাম-ঠিকানা ও ধর্মীয় পরিচয় পাল্টানোর বিষয়ে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধর্ষণের অভিযোগ পেয়েই আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। পরে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু আসামি ছয় মাস জেলে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান।'

ওসি বলেন, 'আদালত থেকে জারি করা সাজা পরোয়ানায় আসামির নাম আছে সবুজ এবং ঠিকানা ফেনী ও লালখান বাজারে। পুলিশ সেই নাম-ঠিকানা ধরে কয়েকবার অভিযান চালালেও খুঁজে পায়নি। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান শনাক্ত করে মামলার বাদীকে নিয়ে কুমিল্লায় গিয়ে গ্রেপ্তার করি। বাদী নিজে তাকে শনাক্ত করেছেন।'

ওসি আরও বলেন, 'সুপন নাম-ঠিকানা ও ধর্মীয় পরিচয় পাল্টে "মো. সবুজ" হিসেবে নাম দিয়েছিল। তবে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার সময় তার বাবার আসল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। আদালতের ওই কাগজের সূত্র ধরে সুপনকে খুঁজে পাওয়া যায়।'

ওসি সন্তোষ জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সুপনের বাবার নাম রাধাকৃষ্ণ দেবনাথ ও মায়ের নাম কানন বালা দেবনাথ। তাদের বাড়ি কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল গ্রামে।

'সুপন গয়না তৈরির কাজ জানতেন। নোয়াখালী শহরে একটি গয়নার কারখানায় তিনি কাজ করতেন। ঘটনার বছরখানেক আগে তিনি চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন। লালখান বাজার এলাকায় বাসা ভাড়া নিলেও তার আসল নাম-পরিচয় কেউ জানত না। ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি পুলিশকে ভুয়া নাম-ঠিকানা ও ধর্মীয় পরিচয় দেন। তার দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিল হয় এবং পরে সাজা হয়,' বলেন ওসি।

কারাগার থেকে বেরিয়ে সুপন তার নাম আবারও পাল্টে 'নারায়ণ' পরিচয় দিয়ে কুমিল্লা শহরের ছাতিপট্টি এলাকায় একটি দোকানে কাজ নিয়েছিল বলে ওসি জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Budget support from WB, ADB: $1.1b loan likely by December

The World Bank and the Asian Development Bank are preparing to submit proposals to their boards for $1.1 billion in budget support for Bangladesh, finance ministry officials have said.

9h ago