কলকাতায় চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ-কর্মবিরতি

চিকিৎসকদের সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (ফোরডা) হাসপাতালগুলোতে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডাকে চিঠি পাঠিয়েছে।
নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ছবি: ডয়চে ভেলে
নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ছবি: ডয়চে ভেলে

আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার  প্রতিবাদে দেশব্যাপী কর্মবিরতি পালন করছেন ভারতের চিকিৎসকরা। হাসপাতালগুলোতে সীমিত আকারে শুধু জরুরি চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

গতকাল সোমবার চিকিৎসকদের সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (ফোরডা) হাসপাতালগুলোতে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডাকে চিঠি পাঠিয়েছে।

চিঠিতে কলকাতায় জুনিয়র চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনাকে 'ভারতের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সম্প্রদায়ের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায়' হিসেবা অভিহিত করা হয়।

একজন কর্তব্যরত চিকিৎসকের সম্ভ্রম ও জীবন রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য ফোরডা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের পদত্যাগ দাবি করেছে।

একইসঙ্গে বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের ওপর যেন কোনো ধরনের দমন-পীড়ন চালানো না হয় এবং এই অপরাধের বিচারে যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেই দাবিও জানায় সংগঠনটি।

চিকিৎসকদের সংগঠনের অপর দাবি হলো স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য নিরাপত্তা প্রোটোকল চালু। তারা দাবি করে, কেন্দ্রীয় সরকারকে সব স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি বিশেষ প্রটোকল চালু করতে হবে। 

কর্মবিরতির ফলে কলকাতার বেশিরভাগ হাসপাতালের কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। অসংখ্য রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজন বিক্ষোভের কারণে বিপাকে পড়েছেন।

উত্তর প্রদেশের লখনৌতে বিক্ষোভরত চিকিৎসকরা কিং জর্জ মেডিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগে তালা দিয়ে দেয়। এ সময় রোগী ও তাদের আত্মীয়রা দরজায় ধাক্কা দিয়ে তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন।

কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের মূল ফটক। ছবি: ডয়চে ভেলে
কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের মূল ফটক। ছবি: ডয়চে ভেলে

মুম্বাইয়ে জেজে হাসপাতাল, সিওন হাসপাতাল, নায়ের হাসপাতাল ও কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতাল বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে।

দিল্লির এআইআইএমএস হাসপাতালে শল্যচিকিৎসার সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমেছে। রোগী ভর্তির হার কমেছে ৩৫ শতাংশ। সংবাদ মাধ্যম পিটিআই জানিয়েছে, কলকাতার ঘটনাকে ঘিরে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরাও কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপন জারি করে চিকিৎসকদের কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ হিসেবে হাইকোর্টের একটি রায়ের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে চিকিৎসকরা বিক্ষোভ করতে পারেন না।

ইন্ডিয়ান মেডিকাল অ্যাসোসিয়েশন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাড্ডার কাছে চিঠি পাঠিয়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হামলা ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের দাবি করেছে। এ ছাড়াও, সংগঠনটি সব হাসপাতালকে 'নিরাপদ জোন' হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি করেছে।

চিকিৎসকদের ওপর হামলা ঠেকাতে ২৫টি রাজ্যে পৃথক পৃথক আইন রয়েছে, কিন্তু এগুলো তেমন একটা কার্যকর না। 'কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ও কঠোর আইনের অভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না', দাবি করে সংগঠনটি।

ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে জানিয়েছে, চলমান আন্দোলন-ক্ষোভের সূত্রপাত গত শুক্রবার ভোরে। আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় দায়িত্ব পালন শেষে বিশ্রাম নেওয়া এক পোস্টগ্র্যাজুয়েট পড়ুয়া চিকিৎসকের (৩১) মরদেহ পাওয়া নিয়ে। সেদিন থেকেই জরুরি বিভাগ ছাড়া অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকরা ওই নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করার অভিযোগ তুলে সোচ্চার হন। ডাক দেন কর্মবিরতির। দাবি তোলেন হত্যাকারীদের শাস্তির।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সোদপুরে থাকতেন ওই নারী চিকিৎসক। মা–বাবার একমাত্র সন্তান ওই চিকিৎসক এমবিবিএস শেষে আর জি কর মেডিকেল কলেজে পোস্টগ্র্যাজুয়েট করছিলেন। ছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেইনি চিকিৎসক হিসেবে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। দিবাগত রাত দুইটায় আরও চারজন চিকিৎসক বন্ধুর সঙ্গে তিনি নৈশভোজ সারেন। এরপর চারতলার একটি কক্ষে বিশ্রাম নিতে যান। পরদিন সকালে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। 

ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পুলিশ ইতোমধ্যে সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে। সিসিটিভির ফুটেজ ও ঘটনাস্থলে পাওয়া তার হেডফোন থেকে পুলিশ সঞ্জয়কে চিহ্নিত করে ও গ্রেপ্তার করে। ঘটনারে রাতে সে আরজি কর হাসপাতালে অবস্থান করছিল। বাইরে থেকে মদ পান করে গভীর রাতে সে হাসপাতালে প্রবেশ করে এবং সেমিনার হলে চলে যায়। সেখানেই সে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করে বলে অভিযোগ।

 

Comments

The Daily Star  | English

Six state banks asked to cancel contractual appointments of MDs

The Financial Institutions Division (FID) of the finance ministry has recommended that the boards of directors of six state-run banks cancel the contractual appointment of their managing directors and CEOs..The six state-run banks are Sonali Bank, Janata Bank, Agrani Bank, Rupali Bank, BAS

41m ago