প্রতারণার অর্ধকোটি টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী, পিবিআইয়ের হাতে ধরা

হাসিব শেখ। ছবি: সংগৃহীত

২৭ বছর বয়সী হাসিব শেখ চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ড্রপ আউট হয়ে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকে চাকরি নেন। পরে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর একটি এজেন্সিতে   সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ পান।

সেখানে লাখ লাখ টাকার নগদ লেনদেন দেখে চিন্তা করেন নিজেই কিছু করার। পরিকল্পনা অনুযায়ী এক ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। 

চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী পালিয়ে ওই টাকা দিয়েই কেনেন ২টি ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও আসবাবপত্র।

গ্রেপ্তার এড়াতে হাসিব পাল্টে ফেলেন নিজের নাম, বন্ধ করে দেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মোবাইল নম্বর। তবে এত কিছু করেও পার পাননি তিনি। 

গতকাল রোববার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইয়ের) রাজশাহী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। হাসিবের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তার বাবা হেদায়ের শেখ (৫৫) এবং মা ফিরোজা বেগমকে (৫০)। জব্দ করা হয়েছে আত্মসাতের ৩৭ লাখ টাকা।

আজ সোমবার রাজশাহী পিবিআই পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, হাসিব শেখ ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর ডিস্ট্রিবিউটর এম এস জাওয়াদ এন্টারপ্রাইজের সুপারভাইজার ছিলেন। ইপিজেডে থাকতেন পরিবারসহ। 

ইপিজেড এলাকার মো. মাসুদ রানার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মাসুদ রানা মিনি সুপার শপে' গিয়ে হাসিব কোম্পানি থেকে পাইকারি সিগারেট কিনলে ভালো অফার আছে বলে জানায়। মাসুদ রানা এই অফারে সম্মত হয়ে বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট কেনার জন্য হাসিবের কথা মতো গত বছরের ৯ অক্টোবর নগদ ২০ লাখ এবং দুটি চেকের মাধ্যমে ১০ লাখ এবং ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা দেন।

এসপি বলেন, 'টাকা নেওয়ার পর হাসিব সরাসরি বাসায় চলে যান এবং এক কাপড়ে তার মা-বাবাকে নিয়ে রাজশাহী চলে যান। তার দেশের বাড়ি পিরোজপুর হলেও গ্রেপ্তার এড়াতে তারা রাজশাহী যান।'

'তিনি তার নিজের ও বাবা-মায়ের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। এদিকে সময়মত ডেলিভারি না পেয়ে পরে মাসুদ রানা জানতে পারেন হাসিব পালিয়ে গেছে। এই ঘটনায় পরে তিনি মামলা করেন ইপিজেড থানায়,' বলেন তিনি

এসপি নাইমা আরও বলেন, 'বাংলালিংকে চাকরি করার সুবাদে হাসিব টেকনোলজি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখতেন, তাই তাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ট্রেস করা সম্ভব হয়নি। রাজশাহী গিয়ে তিনি নিজের নাম বদলে ফেলেন। সেখানে ১৬ লাখ টাকা দিয়ে কেনেন দুটি মোটরসাইকেল, দুটি ইজিবাইক এবং আসবাবপত্র। ভাড়া নেন দুটি বাসা। রাতে এক বাসায় এবং দিনে আরেক বাসায় থাকতেন।'

'রাজশাহীতে থাকলেও বাকি টাকা দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জমি কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন হাসিব। কিন্তু তার আগেই ধরা পরেন পুলিশের হাতে,' যোগ করেন নাইমা।

ট্রাফিকের মামলার স্লিপে মেলে সূত্র

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন জানান, রাজশাহীতে নতুন নম্বর ব্যবহার করলেও, মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে সেখানে ট্রাফিক পুলিশের মামলার শিকার হন হাসিব। মামলার স্লিপে যে নম্বর হাসিব দেন, তার সূত্র ধরে তাকে পুলিশ খুঁজে পায় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, 'এর আগে একইভাবে আরেক কর্মী টাকা হাতিয়ে পালিয়ে গেলে সেটি দেখে উৎসাহিত হন হাসিব। আর পরিকল্পনা করেন ক্রাইম পেট্রল দেখে। এমনকি ব্যাংকের চেকের টাকাও তিনি তার ২ কর্মীর মাধ্যমে তোলেন, যেন ধরা না পড়েন।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh at a historic crossroads: Dr Kamal Hossain

Eminent jurist Dr Kamal Hossain today said Bangladesh stands at a turning point of history following recent mass uprisings

1h ago