রহিমা বেগম স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন: পিবিআই

রহিমা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

অপহরণ নয় বরং স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন নিখোঁজ থেকে উদ্ধার হওয়া মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম। উদ্ধার হওয়ার পর তিনি আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন সেখানেও অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর আব্দুল মান্নান জানান, রহিমা বেগম আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তার সঙ্গে বাস্তব ঘটনার অসঙ্গতি আছে। এখন পর্যন্ত রহিমা বেগমের দেওয়া তথ্য বিভ্রান্তিমূলক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুরের সৈয়দপুর গ্রামে কুদ্দুসের বাড়ি ঘুরে এসেছেন গত ২৭ সেপ্টেম্বর। তিনি এখন বান্দরবানে যাবেন । বান্দরবান সদরের ইসলামপুরে রহিমা বেগম গিয়েছিলেন। একটি হোটেলে তিনি কাজও নিয়েছিলেন। সেখানকার তথ্যও যাচাই করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

আব্দুল মান্নান বলেন, 'আমি বোয়ালমারী গিয়েছিলাম রহিমা বেগমের জবানবন্দির সত্যতা যাচাই করত। সেখানে থাকার সময় রহিমা বেগম যে কথা বলেছেন, আদালতে সেভাবে জবানবন্দি দেননি। সেখানে স্বামী ও মেয়েদের সঙ্গে ঝগড়া করে এসেছেন বলে জানিয়েছিলেন। যা জবানবন্দির সঙ্গে মিল নেই। এছাড়া জবনাবন্দিতে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বলতে বান্দরবানকে বুঝিয়েছেন। জবানবন্দীতে বলেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে করে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। আমরা জানি বান্দরবানে কোনো রেললাইন নেই।'

পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রহিমা বেগম আদালতে ২২ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছেন, আমাদের কাছে যেসব তথ্য দিয়েছেন, সেই তথ্যে আমরা যাচাই করে দেখেছি। ইতোমধ্যে তাকে অপহরণের বিষয়টি আমাদের কাছে সঠিক প্রমাণ হয়নি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত তাদের যে বিরোধ আছে, তাতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য তিনি এসব করে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে।'

সৈয়দ মুশফিকুর রহমানের ভাষ্য, 'মামলাটি যদি আমাদের কাছে সত্যি মনে না হয় এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে যদি মনে হয় এটি মিথ্যা মামলা, তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া মরিয়মদের মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তদন্তে যদি তারা নির্দোষ হন, তবে তারাও আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।'

জন্ম নিবন্ধন করার জন্য রহিমা বেগম সৈয়দপুর গ্রামে গেছিলেন জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, 'রহিমা বেগম মূলত ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে তার পূর্ব পরিচিত কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে যান একটি আইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন করার জন্য। যাতে তিনি বান্দরবানে যে কাজটি নিয়েছেন তা করতে পারেন এবং লোক চক্ষুর অন্তরালে থাকতে পারেন। সেখানে অবস্থান করে ১৬ সেপ্টেম্বর যান সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হকের কাছে। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, "আমার জন্ম হয়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। কর্মের তাগিদে বাগেরহাটে থাকি। সেখানে গৃহপরিচারিকার কাজ করি।" এতে সন্দেহ হওয়ায় তাকে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি দেওয়া হয়নি।'

তদন্তে রহিমা বেগমের ২টি আশ্রয়স্থল পাওয়ার কথা জানিয়ে, এসপি বলেন, 'বান্দরবানের ইসলামপুর গ্রামের মনি বেগমের বাড়িতে এবং ফরিদপুরের বোয়ালমারী সৈয়দপুর গ্রামে ছিলেন রহিমা বেগম। ২ জায়গাতে অবস্থানকালে তিনি ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। বান্দরবানে থাকার সময় তিনি মনি বেগমকে বলেছিলেন তার স্থায়ী ঠিকানা বোয়ালমারী থানার সৈয়দপুর গ্রামে। তার একটি ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এবং একটি মেয়ে ১ মাস বয়সে মারা গেছে। কিন্তু এর কোনটিরও সত্যতা নেই।'

'তিনি বান্দরবান এলাকার মণি বেগমের ভাতের হোটেলে চাকরি করেছেন। হোটেল মালিক তাকে স্থানীয় একটি ক্যাম্পে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন। চাকরির জন্য তার জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ডের প্রয়োজন। তখন তিনি ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুরে যান,' পিবিআই পুলিশ সুপার যোগ করেন।

গত ২৭ আগস্ট রাতে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়ার বাড়ি থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন মরিয়ম মান্নান ও তার ভাই-বোনেরা। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর মাকে পাননি তারা। এরপর সাধারণ ডায়েরি করেন। পর দিন ২৮ আগস্টে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরী আক্তার।

মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র‌্যাব ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন— খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া (৪০), রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল ঘটক ওরফে বেলাল হাওলাদার (৬০), দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন (৫০), রফিকুল ইসলাম পলাশ (৩৬), জুয়েল (৪০), ও হেলাল শরীফ (৪০) । বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরে বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ী থেকে রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। পরেরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে নিজেকে অপহরণের দাবি করেন জবানবন্দি দেন। সেসময় মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় তাকে মুক্তি দেয় আদালত।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

7h ago