রাজার তথ্যে আউয়াল ও নুরনবী গ্রেপ্তার, মোবাইল ফোন উদ্ধার: এসপি
টাঙ্গাইলে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল এক্সপ্রেসের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ডাকাত দলের আরও ২ সদস্য মো. আব্দুল আউয়াল ও নুরনবীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় নুরনবীর কাছ থেকে ডাকাতির সময় ছিনিয়ে নেওয়া একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার দুপুর ১২টায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার তার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, রিমান্ডে থাকা আসামি রাজা মিয়ার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টাঙ্গাইল (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে এক অভিযানে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গতরাত ৫টার দিকে কালিয়াকৈরের টান সূত্রাপুর এলাকা থেকে আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সকাল ৯টার দিকে নুরনবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেসময় নুরনবীর কাছ থেকে ডাকাতির সময় ছিনিয়ে নেওয়া একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
সরকার মোহাম্মদ কায়সার আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত আউয়াল (৩০) কালিয়াকৈরের কাঞ্চনপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে। নুরনবী (২৬) কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধোনারচর পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাহেজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি বর্তমানে কালিয়াকৈরের শিলাবহ পশ্চিমপাড়া এলাকায় থাকতেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার ভোরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে ডাকাত দলের এক সদস্য রাজা মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে লুট করা ৩টি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। গতকাল তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
গতকাল বিকেলে রাজা মিয়াকে আদালতে তোলা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মধুপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুরাদ হাসান ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দ ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাজা মিয়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুনুর রশিদের ছেলে এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের বাস সার্ভিস ঝটিকা পরিবহনের একজন চালক।
পুলিশ জানায়, বাস ডাকাতির শুরুতে রাজা ঈগল পরিবহনের বাসটির চালককে সরিয়ে নিজে বাসটি চালানোর দায়িত্ব নেন। পরে ভোররাতে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ায় যাত্রীসহ বাসটি ফেলে দিয়ে ডাকাতির মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান।
ডাকাতি ও সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনায় বাসের যাত্রী হেকমত আলী অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করে মধুপুর থানায় মামলা করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে।
বাস যাত্রীদের বরাতে মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মঙ্গলবার রাতে যাত্রীবাহী ঈগল পরিবহনের বাসটি ২৪ থেকে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিল। মধ্যরাতে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড় থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল কাঁধে ব্যাগ নিয়ে যাত্রী বেশে বাসটিতে ওঠেন। বাসটি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার নাটিয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছালে তারা অস্ত্র বের করে যাত্রী, বাসচালক ও হেল্পারের চোখ, হাত ও মুখ বেঁধে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নেয়।'
ওসি জানান, চলন্ত অবস্থায় তারা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং বাসের এক নারীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও মারধর করে। পরে ভোর সাড়ে ৩টার দিকে বাসটিকে ঘুরিয়ে টাঙ্গাইলে মধুপুর উপজেলার রোকতিপাড়ায় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ছেড়ে দেয়।
যাত্রী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে মধুপুর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায় বলেও জানান তিনি।
Comments