দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণে প্রথমবার ‘এয়ার-ফ্লো’ মেশিন ব্যবহার

পেঁয়াজ, পাবনা, এয়ার-ফ্ল মেশিন,
সুজানগর উপজেলার ২টি গ্রামে আধুনিক এয়ার-ফ্ল মেশিন সংযুক্ত বিশেষ সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা হয়েছে। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

দেশে প্রতি বছর চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হলেও আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠেনি। ফলে, প্রতি বছর উৎপাদিত পেঁয়াজের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরে নষ্টের সমপরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করে দেশের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে।

দেশের কৃষি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হলেও পেঁয়াজ সংরক্ষণে কৃষকরা এখনো প্রাচীন পদ্ধতিতে বাঁশের মাচায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন। প্রাচীন এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা গেলেও বড় একটি অংশ প্রতি বছর পচে নষ্ট হয়ে যায়। তবে, দেশে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ সংরক্ষণে প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা হয়েছে পাবনার সুজানগরে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্টের (আশা) উদ্যোগে উপজেলার ২টি গ্রামে আধুনিক এয়ার-ফ্লো মেশিন সংযুক্ত বিশেষ এ সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা হয়েছে। আশার কৃষি কর্মসূচির আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে স্বল্প খরচে পেঁয়াজ সংরক্ষণে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আশার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (কৃষি) মো. শামসুদ্দিন বলেন সুজানগর উপজেলায় প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু পেঁয়াজ চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে টিনের ঘর বা সেমিপাকা ঘরে উঁচু বাঁশের মাচা তৈরি করে সনাতন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। এতে একদিকে পেঁয়াজে ব্যাপক পচন ধরে, অন্যদিকে শুকিয়ে ওজন কমে যায়। এছাড়া বাঁশের মাচা তৈরি করতে অনেক খরচ হয়। ফলে, কৃষকের অনেক সময় লোকসান গুণতে হয়। এসব বিবেচনা করে উপজেলার তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের পোড়াডাঙ্গা গ্রামের ৩টি বাড়িতে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎচালিত এয়ার-ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'

প্রতিষ্ঠানটির কারিগরি বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী মো. শাহিন শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ পদ্ধতিতে একটি সেমিপাকা ঘরের মেঝেতে মাত্র ১০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১০ ফুট প্রস্থের একটি বাঁশের মাচা ও ইটের দেওয়াল তৈরি করে তার মাঝে ২০-২২ হাজার টাকা মূল্যের একটি এয়ার-ফ্লো মেশিন বসিয়ে প্রায় ৩০০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়।'

'এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে পচন ধরবে না। এছাড়া পেঁয়াজের ওজন ১০ থেকে ১২ শতাংশের বেশি কমবে না। ফলে প্রচলিত পদ্ধতিতে পেঁয়াজের ঘাটতির প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ কমানো যাবে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এয়ার-ফ্লো মেশিনটি বাইরের বাতাস টেনে পেঁয়াজের স্তূপের নিচে নিয়ে যাবে। পরে সেই বাতাস পেয়াজের স্তূপ ভেদ করে ওপরে উঠে আসবে। ফলে পেঁয়াজের নিচের এবং ভেতরের গরম সম্পূর্ণ নিরসন করা যাবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা মেশিনটি চালু রাখতে হবে। এতে পেঁয়াজের স্তূপের ভেতর থেকে তাপমাত্রা নিরসন হবে এবং পেয়াজের পচন রোধ হবে।'

ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একইভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয় দাবি করে আশার এই কারিগরি কর্মকর্তা বলেন, 'নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে ১-হর্স পাওয়ারের মেশিন সংযোজিত করে এয়ার-ফ্লো মেশিনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা এবং একটি মেশিন ১০ বছর পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকবে।'

পোড়াডাঙ্গা গ্রামের পেয়াজ চাষি মাসুদ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাচীন পদ্ধতিতে বাঁশের মাচায় গত বছর ৩০০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার পর ১০০ মণ পেঁয়াজের ঘাটতি হয়। তাই আশানুরূপ লাভ করতে পারিনি। তাই এ বছর উৎপাদিত পেঁয়াজের বেশিরভাগ বিক্রি করে দিয়েছি।'

তিনি জানান, এ বছর এয়ার-ফ্লো প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ঘরে ২২৫ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছেন। প্রায় দেড় মাস ধরে এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হলেও এখনো পেঁয়াজে পচন ধরেনি, পাশাপাশি পেঁয়াজের রঙ এখনও সতেজ আছে। এয়ার-ফ্লো মেশিন দিয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে গত এক মাসে তার ৩০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে।

এ পদ্ধতিতে সফল হলে, আগামী বছর তিনি আরও পেঁয়াজ সংরক্ষণ করবেন বলে জানান মাসুদ।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারিভাবে এখনো দেশে পেঁয়াজের আধুনিক সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। পেঁয়াজের পচন রোধে আধুনিক এয়ার-ফ্লো মেশিনের এই প্রযুক্তি কার্যকর হলে আগামীতে পেঁয়াজ চাষিরা সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে উদ্যোগী হবেন।'

Comments

The Daily Star  | English
health reform

Priorities for Bangladesh’s health sector

Crucial steps are needed in the health sector for lasting change.

15h ago